বাসস
  ১১ আগস্ট ২০২৪, ১৯:২১

অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছে সুজন

ঢাকা, ১১ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আশু ও সুদূর প্রসারী করণীয় নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন। 
সংগঠনটি ৫টি অতিদ্রুত ও ১৯টি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা ঠিক করে তা বাস্তবায়নে কাজ করার আহবান জানিয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলানয়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই আহবান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এই ঐতিহাসিক যাত্রার শুরুতেই তাদের প্রতি আমার শুভকামনা রইল। আমি এই সরকারের সফলতা কামনা করছি। 
তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। কিছু কাজ আছে জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে। পাশাপাশি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে।
সুজন বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জরুরি কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে অতি দ্রুততার সাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা; নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে অবিলম্বে অরাজকতা নিয়ন্ত্রণসহ আইন-শৃংখলা রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ; জুলাই-আগস্টে সহিংসতায় নিহতদের তালিকা তৈরি, পরিবারকে সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান; আহতদের সুচিকিৎসাসহ পরবর্তীতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা ও দ্রুত জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শান্তির ব্যবস্থা করা।
সুদূর প্রসারী করণীয় বাস্তবায়নের বিষয়ে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন ও নির্বাচনী আইনের সংস্কার, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংসদের কার্যকারিতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস, মানবাধিকার সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ ও তাঁদের নেতৃত্বের বিকাশ, মানসম্মত শিক্ষা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, রাজনৈতিক দলের সংস্কারসহ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ও নাগরিক সক্রিয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমুখী করতে হবে। নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, নারীর প্রতি বৈষম্য, পরিচয় ভিত্তিক বিদ্বেষ ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার পরিহার করতে হবে। বিরোধীদের দমনপীড়নের সংস্কৃতির অবসান হওয়ার পাশাপাশি বিরোধিতার পরিবর্তে, পারস্পরিক সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে দুই তরুণ উপদেষ্টাসহ নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন  সরকারকে অভিনন্দন জানানো হয়। একই সাথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের আত্মার শান্তি ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও একরাম হোসেন, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।