শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার সাথে ‘পতিত সরকার’ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলের নেতা-কর্মীরা একাকার হয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত দৃঢ়তার মোকাবিলা করবে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ১২ দলীয় জোটের মধ্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
‘গত ৫ আগস্ট দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছর ধরে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা স্বৈরশাসকের অবসান ঘটেছে’ উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির জানান, ‘এ দিনটিকে (৫ আগস্ট) বলা হচ্ছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’। এজন্য তিনি তরুণ সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘হাজার প্রাণের বিনিময়ে আমরা এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশ গড়ার কাজে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ১২ দলীয় জোটের পাশাপাশি আলেম সমাজের কী ভূমিকা হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমরা এ মতবিনিময় সভায় আলোচনা করেছি। আমাদের এ আলোচনা অব্যহত থাকবে।’
অন্যানের মধ্যে ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জা) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এ প্রেস ব্রিফিংযে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘জাতির এক ক্রান্তিকাল-যুগসন্ধিক্ষণে আমরা জামায়াতে ইসলামীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের দপ্তরে এসে মতবিনিময় করেছি। জাতীয় জীবনে বিরাজমান সংকটে একটি ধাপ আমরা অতিক্রম করেছি কিন্তু বাকি রয়ে গেছে আরো অনেক সমস্যা। এ সংকট মোকাবেলা করার জন্য আগামী দিনে একসাথে কীভাবে অগ্রসর হতে পারি সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর এক প্রেস বিজ্ঞপিতে জানানো হয়েছে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায়, দেশের বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, গণহত্যার বিচার, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়াও, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর দেশকে অর্থবহ স্থিতিশীল ও উন্নয়নের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বৈষম্যহীন, সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রযোজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে মতবিনিময় সভায় জামায়াত ও ১২ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ গড়তে চাই’। এ সভায়, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এবং দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশে যে নৈরাজ্যকর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, দেশের প্রতিটি সেক্টরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, বিগত সরকারের অপকর্মের মদদদাতা কর্মকর্তাদের অপসারণ করে সৎ, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান এবং ফ্যাসিবাদীদের লুটপাট করা যে অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার দাবি জানানো হয়।
সভার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধান করে প্রকৃত সংখ্যা জাতির সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি নিহতদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় জাননো হয়, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের এ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এই বিজয়কে দুষ্কৃতকারীরা যেন নস্যাৎ করতে না পারে এজন্য দেশবাসীকে সোচ্চার থাকতে হবে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে এ সভায় জামায়াতের আমীর বলেন, ‘আমাদের ঐক্যকে আরো দৃঢ়তর এবং মজবুত করতে হবে। আমরা একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে সময় অতিবাহিত করছি’।