বাসস
  ২২ আগস্ট ২০২৪, ১৭:০৯

হবিগঞ্জে বন্যা: সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

হবিগঞ্জ, ২২ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার শায়েস্তাগঞ্জ রেলসেতু ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ে শায়েস্তাগঞ্জের উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী(পথ) সাইফুল্লাহ রিয়াদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় রেল যোগাযোগ বন্ধের এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে তখন থেকে সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলাচলকারী ৬টি ট্রেনেই বন্ধ আছে।
শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের মাস্টার গৌর প্রসাদ দাশ পলাশ বলেন, ‘পরবর্তী সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত সিলেট বিভাগের রেলপথে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারী বর্ষণের প্রভাবে হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে; পানির ¯্রােত সিলেট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ‘খোয়াই সেতু’ ছুই ছুই। সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে রেল যোগাযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে হবিগঞ্জের খোয়াই কুশিয়ারা ও কালনী-কুশিয়ারাসহ সকল নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে হবিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধিতে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। ওই নদীর চুনারুঘাট,শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সদরের কিছু এলাকায় বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যা দেখা দিয়েছে। লোকজন গবাদিপশু ও জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। হবিগঞ্জ শহরের নি¤œএলাকা জালালাবাদে বাঁধের পুরনো ভাঙ্গা দিয়ে তীব্র বেগে পানি হাওরে প্রবেশ করে তার শহরের আশ পাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, বৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে আসা পানির জন্য খোয়াই, শিয়ারা ও কালনী-কুশিয়ারাসহ হাওরে পানি বাড়ছে। গত ৯ ঘন্টায় খোয়াই নদীতে মাত্র ১০ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। কিছু এলাকা দিয়ে পানি বের হওয়ায় এবং বৃদ্ধি বন্ধ থাকায় আপাতত শহর রক্ষায় ঝুঁকি কমছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় নেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী খোয়াই নদীর পানি চুনারুঘাটের বাল্লা সীমান্তে বিপদ সীমার ২৭৮ সেন্টিমিটার, শায়েস্তাগঞ্জে ১৬৭ সেন্টিমিটার এবং হবিগঞ্জ শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে ১৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী শেরপুর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৮ সেন্টিমিটার এবং মার্কুলী পয়েছেন্ট ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কালনী কুশিয়ারা নদী আজমিরীগঞ্জে ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
হবিগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক প্রশান্ত সোম মহান জানান, জেলার হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও নবীগঞ্জ উপজেলার সাড়ে ৬ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার মানুষের জন্য ১১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪০জন আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকায় ৯ লাখ টাকা, ১৮০ টন চাউল, ১হাজার ৬০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্ধ করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরে আলম জানান, বন্যায় হবিগঞ্জ জেলার ৩৭৩ হেক্টর বোরো আমন বীজতলা,৬হাজার ৭২৬ হেক্টর রোপা আমন, ১হাজার ৯৪৫ হেক্টর আউশ ও ৪৬৮ হেক্টর জমির শাকসব্জি আক্রান্ত হয়েছে।