বাসস
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৩৯

হিলি স্থল বন্দরে ৬ মাসে ৩১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়

দিনাজপুর জেলার হিলি স্থল বন্দর। ছবি: বাসস

দিনাজপুর, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস): জেলার হিলি স্থল বন্দরে চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর) ৩১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কম। এই সময়ে বন্দর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানির কারণে রাজস্ব আদায়ে এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 

হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হিলি স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে, ৭৪০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রথম ৬ মাস শুল্কমুক্ত, পেঁয়াজ আলু ও চালসহ বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় পণ্য আমদানি বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রক্রিয়ায় কাস্টম বিভাগ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

রাজস্ব কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থ বছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে, ৫৫ কোটি আট লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে, ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে, ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি কারক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ এই বন্দর দিয়ে যে সব পণ্য আমদানি করা হয়, যেমন চাল-ডাল, খৈল, ভুসি, ভুট্টা ও পেঁয়াজসহ অধিকাংশই শুল্কমুক্ত। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চাল। এতে যে শুল্ক ছিল, সরকার সেটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। 

তিনি আরও জানান, আগে প্রচুর পরিমাণে ফল আমদানি হতো। কিন্তু সরকার ট্রাকের চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের প্রথা চালু রাখায় ফল আমদানি বন্ধ আছে। এটি যদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, যতটুকু পণ্য আমদানি করবে, সেই পরিমাণ পণ্যের শুল্ক দিতে হবে, তাহলে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো। সেই সাথে রাজস্ব বাড়তো। অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এখানে বৈষম্য আছে বলে তিনি জানান। 

আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেনাপোলে যে পণ্য সাড়ে তিন ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে, একই পণ্য হিলি বন্দরে পাঁচ ডলারে শুল্কায়ন করা হয়। ফলে আমদানি-কারকেরা এই বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব জটিলতা কাটলে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বাড়বে, সেই সাথে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

মোটর সাইকেলের যন্ত্রাংশের আমদানিকারক জুয়েল হোসেন বলেন, ‘এলসি খোলার সময় ডলারের এক রেট আবার পণ্য আমদানি করে সেটি বিক্রি করে ব্যাংকে বিল পরিশোধের সময় আরেক রেট ধরা হচ্ছে। এতে ডলারে ৩ থেকে ৪ টাকা করে বেশি দিতে হচ্ছে। ফলে পণ্য আমদানি করে লোকসান গুনতে হয় আমদানিকারকদের।

তিনি বলেন, মোটর সাইকেলের যন্ত্রাংশের অনেক প্রকার রয়েছে। আমদানিকৃত পণ্যের ১০ ভাগ পরীক্ষার কথা থাকলেও এখানে সব কার্টন খুলে শতভাগ পরীক্ষা করে কাস্টমস। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছি আমরা। ফলে আমার মতো অনেকে এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এসব ঝামেলায় পড়তে হয় না।

বন্দরের আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম বলেন, হিলি স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ধারাবাহিক ঘটনা। 

তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে বন্দরটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কেউ। বিভিন্ন জটিলতার কারণে আমদানি কার্যক্রম কমে যাচ্ছে। বন্দরের রাস্তা-ঘাটগুলো ভাঙাচোরা, ব্যাংকগুলো চাহিদা মতো এলসি খুলতে দেয় না। সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো কাস্টমস বিভাগ। সব বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কায়ন হবে একই নিয়মে। হিলি স্থলবন্দরও একই ভাবে চলার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয় না। অধিক শুল্কযুক্ত কোন পণ্য আমদানি হলে কাস্টমস নানা ভাবে হয়রানি করে। অমুক এইচএস কোড চলবে না, এই শুল্ক চলবে না, বাড়তি শুল্ক দিতে হবে। একই পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বারবার কেমিক্যাল কিংবা বিএসটিআই টেস্টে পাঠানোর নামে হয়রানি করা হয়। এসব কারণে অনেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করতে চায় না।’ বর্তমান সরকারকে এদিকে নজর দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম গত ৬ মাসে হিলি বন্দরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হলেও আগামী ৬ মাসে এই ঘাটতি পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ, আলু ও মরিচের ওপর থেকে শুল্ক তুলে দেয়া হয়। বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হয় শুধুমাত্র জিরা ও কিসমিস। এই থেকে বেশি রাজস্ব আসে। আমদানি বেড়েছে। তবে শুল্ক তুলে দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে বর্তমানে যেভাবে আমদানি-রফতানি চলছে তাতে আগামী ৬ মাসে এমন অবস্থা থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমদানিকারকদের অভিযোগের বিষয়ে শফিউল ইসলাম বলেন, ‘নিষিদ্ধ কিছু পণ্য ছাড়া সবকিছু আমদানি করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে তাদের কোন বাধা দেওয়া হয় না। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী হিলি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সকলেই ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।’