শিরোনাম
ঢাকা, ৭ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ৪৫ শতাংশ প্রবাল সাদা হয়ে গেছে এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে বাকিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজধানীর পানি ভবনে জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘নতুন বাংলাদেশে পরিবেশ, জলবায়ু ও রাজনীতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড’ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রবাল উদ্ধার করা যাবে, যদি না সব প্রবাল সাদা হয়ে মারা যায় এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপ পানির নিচে তলিয়ে যায়।
থাইল্যান্ডের উদাহরণ উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, শুধুমাত্র এ বছরই থাইল্যান্ডের ১১টি প্রবাল দ্বীপে পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারণ সেখানে ১০-১১ শতাংশ প্রবাল সাদা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে আরও অনেক প্রবাল দ্বীপ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে একটি মাত্র প্রবাল দ্বীপ। থাইল্যান্ড তার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট ক্রাবি দ্বীপে পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ করছে এবং পর্যটকদেরও নিষিদ্ধ করেছে। তবে আমরা পর্যটকদের নিষিদ্ধ করিনি।
রাজধানী ঢাকার খালগুলোকে দখলমুক্ত করার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, রাজধানীর খালগুলোকে কেন্দ্র করে ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার জন্য ঢাকার খালগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে ব্যাপক পরিকল্পনা চলছে।
উপদেষ্টা বলেন, একটি কমিটি (ওয়ার্কিং গ্রুপ) গঠন করা হয়েছে এবং অংশিজনদের সঙ্গে সংলাপ করে তিন দিন কর্মশালা করে প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে।
ওয়ার্কিং গ্রুপে বিভিন্ন সংস্থা যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, নদী সুরক্ষা কমিশন, সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যান্যদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নদী, খাল, বিল ও হাওরের সঠিক তালিকা তৈরির বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এসব বিষয়ে প্রাথমিক কোনো তথ্য নেই।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জেলা পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তালিকা চূড়ান্ত করার পর, আমরা শিগগিরই আমাদের (মন্ত্রণালয়ের) ওয়েবসাইটে নদী, খাল, হাওর ও বিলের যথাযথ তালিকা হালনাগাদ করব।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার নতুন বাংলাদেশ গড়তে পরিবেশ সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা বন সংরক্ষণ এবং দূষণ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করাই আমাদের লক্ষ্য।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যুবকদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, আরডিআরসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদ প্রমুখ।
এছাড়া বক্তৃতা করেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব, মনিরা শারমীন, জাভেদ রশিন, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত এবং সরকারী কর্মকর্তা, পরিবেশবিদ ও তরুণ জলবায়ু কর্মীরা পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিভিন্ন দিক নিয়ে মত বিনিময় করেন।
সেমিনারে জলাভূমি ও নদী দখলের সঙ্গে যারা জড়িত এবং অন্যান্য পরিবেশ দূষণের সঙ্গে জড়িত তাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনে অংশ নিতে অক্ষম ঘোষণার দাবি জানান তরুণ জলবায়ু কর্মীরা।
পরিবেশ বিষয়ক ২০ টিরও বেশি যুব সংগঠন এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।