বাসস
  ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:১০

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি

ঢাকা, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তবমুখী ও কার্যকর পদক্ষেপের ফলে গত ১০০ দিনে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র, শিশু ও নারীসহ এক হাজারের বেশি মানুষ শহিদ এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারাত্মক আহত হওয়ার মধ্যদিয়ে ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকার শপথ নেয়।

ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন এবং আহতদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।

প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত সারাদেশে ৮৭২ জন শহিদ এবং আহত ১৯,৯৩১ জনের তালিকা তৈরি করেছে এবং প্রাথমিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন শহিদ ও আহতদের অন্তর্ভুক্ত করে তালিকাটি হালনাগাদ করা হচ্ছে।

রাজধানীর ১৩টি হাসপাতাল এবং সারাদেশের বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনামূল্যে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ‘রাউন্ড দ্য ক্লক কোঅর্ডিনেশন সেল’ গঠন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

চোখ, স্নায়বিক সমস্যা ও পায়ে আঘাতসহ গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চীন, নেপাল, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বিদেশি মেডিকেল টিম দেশে আনা হচ্ছে।

টিমগুলো হাসপাতাল পরিদর্শন করছে এবং রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের পরামর্শ দিচ্ছে। বিদেশি চিকিৎসকরা আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে ছাত্র-জনতা বিদ্রোহের সময় গুলিবিদ্ধ ফাহিম হাসানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য ২৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মো. বাসিদ খান মুসা নামের সাত বছরের শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে এবং চিকিৎসার জন্য ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

অপর আহত মোহাম্মদ লুৎফর রহমান কাসেমীকে (৩৯) থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে এবং তার চিকিৎসার জন্য ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

তবে দেশের বিশেষ করে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে বরাদ্দকৃত শয্যার চেয়ে আহত রোগীর সংখ্যা বেশি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।

গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম এবং প্রতিটি পৌরসভায় তিনটি মেডিকেল টিম বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক কাজ করেছে।

সেই সঙ্গে বন্যা দুর্গতদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে ব্র্যাক মেডিকেল টিম, সাজেদা ফাউন্ডেশন, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা।

সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী বর্ষাকাল থেকে দেশে ডেঙ্গু রোগের দ্রুত বৃদ্ধি দেখা গেছে এবং এই সময়ের মধ্যে এই রোগে ৩৭০ জনেরও বেশি মারা গেছে এবং ৭৬ হাজার মানুষের আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছর, ৩,২১,১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং ১,৭০৫ জন মারা গেছে।

সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্পেশাল ডেঙ্গু কর্নার স্থাপনসহ অন্তর্র্বর্তী সরকার রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ডিএনসিসি ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হয়েছে। সারাদেশে মোট ১,০১,১৫৯টি ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট এবং ২৬,১৩৫টি মশারি বিতরণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি, ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালসমূহে অতিরিক্ত ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ৪০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স পদায়ন করা হয়েছে। জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল (২০২৪-২০৩০) এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং তা অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একটি রিস্ক কমিউনিকেশন অ্যান্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট (আরসিসিই) প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) সরবরাহ নিশ্চিত করেছে সরকার। বর্তমানে ৪,২১,৮০০ লিটার আইভি ফ্লুইড মজুদ রয়েছে।

সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু বিষয়ক ‘ফোকাল পয়েন্ট’ ব্যক্তি মনোনীত করা হয়েছে, যাদের মাধ্যমে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট, আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) এবং অন্যান্য সরবরাহের মজুদ ও প্রয়োজনীয়তা নিয়মিত সংগ্রহ করা হয়।

ডেঙ্গু অ্যাপে ডেটা ইনপুট করার জন্য সারা দেশের হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে যার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীদের পরীক্ষার ফলাফল অবিলম্বে ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

সারাদেশের সকল সরকারি হাসপাতালের প্রধান, মেডিসিন বিভাগের প্রধান এবং হাসপাতাল প্রধানদের মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।