বাসস
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:১৮

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ছবি : ভিডিও থেকে

ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি ২০২৮ (বাসস) :  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরলেই তরুণ প্রজন্ম জিয়াউর রহমান সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবে।

আজ শনিবার রাতে রাজধানী মিন্টু রোডে শহিদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন-জেডআরএফ আয়োজিত 'শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : যাঁর গল্প আমাদের দর্শন' শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, একজন সৈনিকের কমিটমেন্ট হচ্ছে দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, দেশের মাটির প্রতি; দেশকে রক্ষা করা। দেশের মানুষকে রক্ষা কর, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যখন দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার সময় এসেছে, দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে  আনার সময় এসেছে, সেই সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন।  মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে আসার জন্য মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন। একজন সৈনিক হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছেন। আল্লাহর রহমতে দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি বিশ্বাস করি যেহেতু তিনি ( জিয়াউর রহমান)  সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিলেন, আগামীতে যারা সশস্ত্র বাহিনীতে আসবেন; দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, দেশের মাটিকে রক্ষা করার শপথ নিয়ে যারা আসবেন তাদেরকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের কাজগুলো উজ্জীবিত করবে, সাহসী করবে।

জিয়াউর রহমানের জীবনাদর্শ তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, 'আমরা দেখেছি তিনি  যখন রাজনীতিবিদ হিসেবে কাজ শুরু করলেন, তিনি কিন্তু ঢাকার মধ্যে বসে থাকেননি। একজন রাজনীতিবিদের কাজ হচ্ছে দেশের মানুষকে সহযোগিতা করা, মানুষের কাছে তিনি ছুটে গিয়েছেন। মানুষের সাথে কথা বলেছেন, মানুষের সমস্যা জানতে চেয়েছেন, সেভাবেই  তিনি সমস্যা সমাধান করেছেন।

সকল পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি পরিচয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, রাজনীতিবিদ হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন বলেই তার দল বিএনপি সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে আছে।

দেশে শিল্পের প্রসারে জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং গার্মেন্টস শিল্প প্রসার করে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছিলেন জিয়াউর রহমান। সৈনিক, রাজনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রপ্রধান-সব পরিচয়েই সফল হয়েছিলেন তিনি।

মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র মানে মতপ্রকাশ বা অধিকার প্রয়োগ। ভোটের মাধ্যমে মানুষ সেটা প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন দলের আদর্শের মধ্যে পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যে কোনো মূল্যে কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। এ বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে ঐকমত্য থাকতে হবে। সেইসঙ্গে মানুষের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী ১৫/২০ বছর গণতন্ত্র ধ্বংসের রাহু থেকে মুক্ত থাকব। পাশাপাশি স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশ আমরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে পারব।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ডা. জুবাইদা রহমান নিজের জীবনে শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমার মতো অনেক শিশু-কিশোরের জন্য পাথেয়। তিনি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার দুই পর্বের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)।

প্রথম পর্বে ঢাকার শাহবাগে শহিদ আবু সাইদ কনভেনশন সেন্টারে  দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শিশু-কিশোরদের নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে গল্প বলা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের মঞ্চে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক বিষয়ে শিশু-কিশোরদের গান শোনান বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও বেবি নাজনীন।

পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও জিয়াউর রহমানের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। তাদের অন্যতম আগা খান একাডেমির ছাত্র শাহরিন মো. ছোয়াদসহ কয়েকজন। পাশাপাশি মিলনায়তনের বাইরে জিয়াউর রহমানের জীবনঘনিষ্ঠ অসংখ্য ছবি পরিদর্শন করেন শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, সদস্য সচিব ড. সোহাগ আওয়াল এবং সদস্য ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির, নূরুল ইসলাম মনি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রীতা, জেডআরএফের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, অধ্যাপক আবদুল করিম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, আতিকুর রহমান রুমনসহ রাজনীতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা।

এরপর একইস্থানে দ্বিতীয় পর্বে ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : যার গল্প আমাদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন জেডআরএফের প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট কার্ডিওলোজিস্ট ডা. জুবাইদা রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির স্হায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক। তিনি ১নং কমান্ডার। পরে তিনি ১১ নং সেক্টরেও যুদ্ধ করেছেন। যিনি জেড ফোর্সের অধিনায়ক। এরপর আরও দুটি ফোর্স গঠিত হয়। শহীদ জিয়া তেলিয়াপাড়ায় সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠকে প্রথম প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। তিনি মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিলেন একাত্তরের মার্চে। এরপর তিনি তার সেনা জীবনের পেশায় ফিরে যান। কিন্তু আবারও যখন ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় দুর্যোগ এলো তখন আবার জিয়ার কণ্ঠ শোনা যায়। তিনি কঠিন দায়িত্ব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাকে ক্ষমতার আবর্তে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তিনি দায়িত্ব নেননি। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেসময় সংসদ ছিল না। সর্বক্ষেত্রে ছিল বিশৃঙ্খলা। সবার মাঝে ছিল ভয়।

মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের  নানা অবদান তুলে ধরে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, জাসদের গণবাহিনী যখন সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করছে, জেলখানায় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। অস্ত্র লুট হয়েছে। এমন সময় দায়িত্ব গ্রহণ করার সাহসিকতা, যোগ্যতা এবং দেশপ্রেম শুধু একজনেরই ছিল সেটি জিয়াউর রহমান। যিনি মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছেন এবং সাহস জুগিয়েছেন। তিনি কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব নেননি। দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েক দিনের মধ্যেই দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও গণমাধ্যমসহ প্রায় সব খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গ্রাম সরকার গঠন করেন। এভাবে একে একে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯ দফায় সংযুক্ত করলেন। গ্রামে-গঞ্জে মাইলের পর মাইল ঘুরে বেড়িয়েছেন। যা সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান প্রত্যেকের কল্যাণে কাজ করেছেন। যার ফল আমরা এখনো ভোগ করছি। জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান শুধু বিএনপিকে শক্তিশালী করেননি বরং দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছেন। যা দেশের ইতিহাসে আর হয়নি। আগামীতেও আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত ও মুনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক ড. মো. ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার। অধ্যাপক নাসরিন সুলতানার পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি ফাহাম আব্দুস সালাম, ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী, অধ্যাপক হালিম খান, চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, মুক্তিযোদ্ধা লুতফুল হাসান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুফলেহ আর ওসমান, প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ক ইফতেখার মাহমুদ, একাডেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র কায়সান আহিয়ান রেজা।

অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের ওপর একটি বিশ্লেষণ ধর্মী ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলেসের এমিরেটাস অধ্যাপক এডি ভান ড্রিসে।