শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : স্থানীয় সরকারের উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব করা হবে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহমেদ।
নির্বাচনে যাতে সরকারি চাকুরেরাও প্রার্থী হতে পারেন সেই প্রস্তাব রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের খরচ কমাতে স্থানীয় সরকারের সবকটি নির্বাচন একসঙ্গে করার সুপারিশ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা জানান।
ড. তোফায়েল বলেন, বিভিন্ন জায়গায় অংশীজনদের সঙ্গে সভায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জোর দাবি জানিয়েছে সংস্কার কমিশনের কাছে। নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত করতে এটি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আমাদের দেশে খুবই ব্যয়বহুল হয়েছে। ব্যয়বহুল দুই সেন্সে। একটা প্রার্থীর জন্য আরেকটা সরকারের জন্য। আমি নির্বাচন কমিশন থেকে তথ্য নিয়ে দেখেছি। গত সরকারের সময়ে উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, এতে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। ১৯ লাখ লোককে নিয়োগ করা হয়েছে। দিন লেগেছে ২২৫ দিন। তাহলে এই জিনিসটা অনেক ব্যয়বহুল, অনেক সময় নষ্ট করে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ফলে কাজকর্ম ব্যাহত হয়।’
খরচের বহর না কমালে ভালো মানুষ নির্বাচনে আসতে পারবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একটা কমন কথা আসছে যে, ভোট কেনাবেচা হবে। ভোটের মধ্যে টাকা খরচটাও শুধু সংসদীয় পদ্ধতিতে হচ্ছে তাতো নয়। একজন মেয়র হতে হলে ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে খরচ করতে হচ্ছে। এই খরচের বহরটা কিন্তু কমাতে হবে নির্বাচন থেকে। সেজন্য আইন পরিবর্তন করে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন যদি আমরা একসঙ্গে একইদিনে করতে পারি তাহলে খরচ হবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। আর সময় লাগবে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ দিন। একেকটা নির্বাচন একেক সময়ে হলে সরকারের সময়, বাজেট এবং পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্ক থাকছে না।’
প্রার্থীদের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ, না ভোটের বিধান তৈরি, পেশী শক্তির ব্যবহার রোধেও সুপারিশ করবে কমিশন। তবে এক্ষেত্রে নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করবেন তারা, যোগ করেন ড. তোফায়েল।
ইউরোপের উদাহরণ টেনে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, চাকরি করে কিংবা অন্য পেশার সঙ্গে সংযুক্ত এমন কারো মেয়র-কাউন্সিলর হতে বাঁধা নেই। কিন্তু ফুলটাইম এক্সিকিউটিভ বডিতে থাকলে তিনি এককভাবে করবেন না। উনি কিন্তু কয়েকজনকে নিয়ে একটা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল করবেন। যেমন কলকাতা কিংবা লন্ডন সিটি করপোরেশনে মেয়র-কাউন্সিলর আছে। এটা এখানেও হতে পারে। চেয়ারম্যান ফুল টাইম করবেন দুই-তিনজন মেম্বারকে সঙ্গে নিয়ে। বিকল্প প্রপোজালও আছে। এটাকে ৫ বছরের জন্য না করে দুই বছর অথবা একবছর করে রোটেটিং করা যায় কিনা। এসব বিবেচনা করা হবে।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন কেউ চাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্নটা সব জায়গায় বলা হচ্ছে। আমরা এটা বিবেচনা করছি। কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে যদি সাংঘর্ষিক হয় তাহলে এটা করা যাবে না। কারণ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্ন না থাকে তাহলে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আনা কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে আমরা সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা করবো। সব জায়গাতেই একই রকম মতামত পাওয়া যাচ্ছে।
কমিশন কবে প্রতিবেদন জমা দেবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অফিসিয়ালি আছে। আমরা চেষ্টা করবো সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে দেওয়ার।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আবদুর রহমান, ড. মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ইলিরা দেওয়ান, অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দিন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।