শিরোনাম
।। জাহাঙ্গীর আলম ।।
ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ (বাসস) : ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় বাসচাপায় ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার বাসচালক মো. নুরুদ্দীন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে বেপারী পরিবহনের চালাক মো. নুরুদ্দীন বলেন, ঘটনার ৭ দিন আগে থেকে গাড়িটি গ্যারেজে ছিল। গাড়ির ব্রেক ও ক্লাচ প্লেটের সমস্যা ছিল। গাড়ির মালিক ডাব্লিউ বেপারীর ছেলে পারভেজ আমাকে এ অবস্থায় গাড়ি রাস্তায় বের করার জন্য চাপ দেন।
তিনি বলেন, ‘পারভেজ আমাকে বলেন, গাড়ি চালালে ঠিক হয়ে যাবে। তার চাপে শুক্রবার গাড়ি নিয়ে বের হই। গাড়িতে যাত্রী ছিল ৬০ জন। ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় যাওয়ার আগে গাড়ির গতি ছিল ৫৫ কিলোমিটার। ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় ঢুকার আগে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি নাই। গাড়ি ব্রেক ফেল করেছিল। গিয়ার কমাতে চেষ্টা করলেও তা নিয়ন্ত্রণ হয়নি। পরে টোলপ্লাজায় গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। আমি গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যাই। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আমাকে র্যাব আটক করে।’
আজ বেপারী পরিবহনের চালাক মো. নুরুদ্দীন ও মালিক ডাব্লিউ বেপারীকে ঢাকার চিফ জুড়িসিয়িল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুন্সীগঞ্জের হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুর রহমান আসামি নুরুদ্দিনের জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন।
একইসঙ্গে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপর আসামি ডাব্লিউকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। পরে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের আদালত আসামি নুরুউদ্দিনের জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে একই আদালত অপর আসামি ডাব্লিউকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বাসচালক নুরুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর থেকে ডাব্লিউকে গ্রেফতার করা হয়।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়িতে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে একই পরিবারের চারজনসহ দুটি গাড়ির ছয় আরোহী নিহত ও চারজন আহত হন। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান।
এ ঘটনায় গত ২৮ ডিসেম্বর নিহত আমেনা আক্তারের ভাই মো. নরুল আমিন বাদী হয়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা বাস চালক, হেল্পার, বাসের মালিক ও ব্যাপারী পরিবহন ব্যানার কর্তৃপক্ষ।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ ডিসেম্বর মামলার বাদী নরুল আমিনের বোনের পরিবার প্রাইভেটকারে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার পথে ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় টোল দেওয়ার জন্য বেলা সোয়া ১১ টার দিকে অপেক্ষায় ছিল। তাদের বহনককারী গাড়ির সামনে মোটরসাইকেলে এক ভদ্রলোক তার স্ত্রী ও সন্তানসহ টোল প্রদান করছিলেন। বেপারী পরিবহন সামনে থাকায় ও মোটরসাইকেলটি টোল দেওয়ার সময় প্রাইভেটকারকে পেছন দিক হতে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে বেপারী পরিবহন ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেটি দুমড়ো মুচড়ে যায়। প্রাইভেট কারে থাকা একই পরিবারের ৪ জনসহ ৬ জন নিহত হন।
তারা হলেন, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেটকারের মালিক নুর আলমের স্ত্রী আমেনা আক্তার, তার বড় মেয়ে ইসরাত জাহান, ছোট মেয়ে রিহা মনি, ইসরাত জাহানের ছেলে আইয়াজ হোসেন, মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার ও তার ছেলে মো. আবদুল্লাহ।
এ ঘটনায় প্রাইভেট কারের মালিক নুর আলম, তার বোন ফাহমিদা আক্তার, প্রাইভেট কারের চালক হাবিবুর রহমান ও মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়া আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।