বাসস
  ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:৫৫

দেশের ভূখণ্ড রক্ষায় বীরদর্পে কাজ করবো : বিজিবিতে নতুন রিক্রুট দুই সেরা সৈনিক

॥ মহসিন বেপারী॥
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম), ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন তারাছা। সীমান্ত ঘেঁষা দুর্গম পাহাড়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে স্কুলে যেতেন নুখিংসাই মারমা। কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও পড়াশোনা বন্ধ করেনি তার বাবা-মা।

নুখিংসাই মারমা রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে জানালেন, শৈশবে তার স্বপ্ন ছিল বিজিবিতে যোগ দেয়ার। দেশের ভূখণ্ড রক্ষায় কাজ করবেন তিনি ।

বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় নারী সৈনিক হিসেবে নুখিংসাই পড়াশোনা চালিয়ে ঠিকই যোগ দেন স্বপ্নের পেশায়। বিজিবিতে যোগদানের পর টানা ছয় মাস হাড়ভাঙা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। বিজিবির ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের নারী সৈনিক হিসেবে সমাপনী কুচকাওয়াজে ৪৬ জন নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছেন নুখিংসাই। আদিবাসীদের মধ্যে বিজিবিতে প্রথমবার শ্রেষ্ঠ নুখিংসাই মারমা।

দুর্গম পাহাড়ে কৃষক পরিবারের মেয়ে হয়েও কীভাবে এতদূর এলেন নুখিংসাই মারমা? তার পেছনের গল্প শোনালেন   তিনি। নুখিংসাই মারমা বলেন, বাসা বান্দরবানের তারাছায়। পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করায় মেয়ে হয়ে পড়ালেখা করতে অনেক কষ্ট হয়েছে আমার। বাড়ি থেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে স্কুলে যেতে হয়েছে। কোচিং-প্রাইভেটও ছিল না।

অন্য পেশায় না গিয়ে বিজিবিতেই কেন যোগদান করলেন ? এমন প্রশ্নে নুখিংসাই মারমা জানালেন,  শৈশব থেকেই বিজিবির প্রতি তার আকর্ষণ ছিল প্রবল। দেশের ভূখণ্ড রক্ষার্থে কাজ করবেন সেই থেকে নারী সদস্য হিসেবে বিজিবিতে যোগদানের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব।

এক প্রশ্নের জবাবে নুখিংসাই মারমা বলেন, তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট আমি। বাবা কৃষক, মা গৃহিণী। বিজিবিতে আসার পেছনে পরিবারের সবার সাপোর্ট ছিল। মা-বাবা অনেক কষ্ট করে বান্দরবান শহরে এনে পড়াশোনা করিয়েছেন।

বিজিবিতে ছয় মাস প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা নিয়ে নুখিংসাই মারমা জানালেন, বিজিবিতে প্রশিক্ষণ পর্যন্ত আসতে পেরে আনন্দ এবং ভয় দুটোই কাজ করছিল।  প্রশিক্ষণ মানে কষ্ট, তবে শিক্ষকেরা খুবই আন্তরিক ছিলেন।

১০২তম রিক্রুট ব্যাচের ৬৯৫ জনের মধ্যে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করেন মো. নাঈম মন্ডল। নাঈম মন্ডলের সঙ্গেও বাসসের এই প্রতিবেদকের কথা হয়।
নাঈম মন্ডল জানান , বিজিবিতে সৈনিক হিসেবে শপথগ্রহণ করে এই বাহিনীর  গর্বিত সদস্য হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ৬৯৫ জনই সেরা। সেরাদের ভেতর থেকে সেরা হওয়াটা অনেক কষ্টের ছিল। প্রশিক্ষণ সেন্টারের সব ট্রেইনার ভালো ছিলেন, তারা  সহযোগিতা করেছেন।

পরিবার সম্পর্কে নাঈম মন্ডল বললেন, আমার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর থানায়। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আমি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বাহিনীর সদস্য হওয়ার। বিজিবিতে যোগদানের বিষয়ে বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা ছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  অস্ত্র নিয়ে প্রথমবার গুলির অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম ছিল। সবকিছু মিলিয়ে ভালো ছিল। নাঈম মন্ডল বলেন,  আমি দেশের ভূখণ্ড রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-১৯৩ রিক্রুট (জিডি) মো. নাঈম মন্ডল এবং অন্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে তাদের সফলতার জন্য ক্রেস্ট তুলে দেন।

১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে  ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন।

দীর্ঘ ২৩ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।