/ শফিকুল ইসলাম বেবু /
কুড়িগ্রাম, ১৮ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): তিস্তা পাড়ের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামী ২০ আগস্ট বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে তৃতীয় তিস্তা সড়ক সেতু। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষের বহুকালের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
এর আগে পাঁচ দফা সময়সীমা পেছালেও অবশেষে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। আর সংযোগ সড়ক, নদী শাসন, কালভার্ট ও জমি অধিগ্রহণে খরচ হয়েছে আরও ৩৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
তিস্তা নদীর বুকে এটি হলো তৃতীয় সড়ক সেতু এবং এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ। সেতুটি নির্মিত হয় ২০১২ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা এলাকায়। ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিলো ৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয়টি নির্মিত হয় ২০১৮ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে। ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছিলো ১৩১ কোটি টাকা।
এবার চালু হতে যাচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক তৃতীয় সেতুটি। যা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
এলজিইডি অফিস সুত্র জানায়, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ইফাদের (ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট) অর্থায়নে এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের জুনে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, নানা কারণে ৫ বার সময়সীমা পিছিয়ে অবশেষে এ বছরের আগস্টে কাজ শেষ হয়।
সেতুটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ২৯০টি পাইল, ৩০টি পিলার, ২৮টি স্প্যান এবং ১৫৫টি গার্ডার। উভয় প্রান্তে পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১২টি ব্রিজ ও ৫৮টি বক্স কালভার্ট। পাশাপাশি ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে নদী শাসনসহ মোট ৫৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
হরিপুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী কৃষক সিরাজুল হকের মনে খুব আনন্দ। বাসসের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘অবশেষে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হলো। বহু বছর ধরে আমরা এই সেতুর প্রতীক্ষায় ছিলাম। এখন এই একটি সেতুই আমাদের জীবনমান পাল্টে দেবে।’
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুর কারণে এলাকায় জমির দাম বেড়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। আগে রংপুর বা ঢাকায় যেতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এখন সহজেই যাতায়াত করা যাবে। এই সেতুই হবে আমাদের অগ্রযাত্রার চালিকা শক্তি।’
চিলমারীর ব্যবসায়ী রঞ্জিত চন্দ্র সাহা বাসসকে বলেন, ‘এই সেতু চালু হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সোনাহাট স্থলবন্দর আর চিলমারী নদীবন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলবে।’
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘২০ আগস্ট বুধবার সেতুটি চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ সেতুটি তিস্তাপাড়ের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।’
তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই সেতুর উদ্বোধন শুধু একটি অবকাঠামো নির্মাণ নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্ন, উন্নয়ন ও সম্ভাবনার প্রতীক।