বাসস
  ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:১২

তরুণ সুজন গোলদারের টার্গেট কৃষিতে ক্যারিয়ার তৈরী 

তরুণ সুজন গোলদারের টার্গেট কৃষিতে ক্যারিয়ার তৈরী । ছবি; বাসস

॥ আজাদ রুহুল আমিন ॥

বাগেরহাট, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার কচুয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের একজন আদর্শ কৃষি  মডেল ৩১ বছর বয়সী  সুজন গোলদার । সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেও চাকরি নয় তার মূল উদ্দেশ্য কৃষিতে ক্যারিয়ার তৈরী করা।

তার বাবার ১৬ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন কুল বাগান। ২৪ শ গাছে পাচ প্রজাতির ফল বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, রেড আপেল, কাশ্মীরি, চায়না টক মিষ্টি কুল এপারের কোন বাগানে এটির প্রথম দেখা মেলে। নারীদের জন্য চায়না টক মিষ্টি কুল অনেক লোভনীয় ফল হিসেবে এর দাম ও সর্বোচ্চ পাইকারি কেজি ২ শ টাকা। এর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বাগানে কুল থাকার কথা থাকলেও আগেই তা বিক্রি হয়ে যাবে।আগামী মৌসুমে নতুন চমক হিসেবে এ বিশাল বাগানে যোগ হবে আপেল কিং এর ফ্লেভার ও সেইরকম সুস্বাদু মজাদার। খুলনা, পিরোজপুর,বাগেরহাটসহ বাধাল সাইনবোর্ড দৈবজ্ঞহাটি,কচুয়াসহ স্থানীয় বাজারে সুজন গোলদারের বাগানের কুলের রয়েছে অগ্রীম অর্ডার। প্রতিকেজি কুলের পাইকারি মূল্য ১ শ ৫০ টাকা। ইতোমধ্যে ৮ লাখ টাকার কুল বাওকুল বিক্রি হয়েছে। আরও ১০ লাখ টাকার কুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে । 

সুজন গোলদার বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ২০১৭ সালে। গোপালপুর গ্রামের সুভাষ চন্দ্র গোলদারের একমাত্র পুত্র সন্তান সুজন গোলদার বসে নেই অফ সিজনে তরমুজ চাষ করবেন। নিবিড় পরিচর্যায় তার ক্ষেতে ১২ জন কর্মচারী নিয়ে সার্স কৃষি মালচিং ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত মানের সবজি চাষ আগাম শসা, ঝিঙা, করলা চাষ করা হবে। যাতে তেমন কোন সার কীটনাশক ব্যাবহার করবেন না। 

সুজন গোলদার বাসসকে জানান, সরকারি পৃষ্টপোষকতা আর সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করলে পুরো কচুয়াকে সবুজে সবুজে কৃষিতে নব দিগন্তের সুচনা করবেন। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই বারো মাসই ফুলবান বৃক্ষের চাষাবাদ করে  ব্যাপক জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আম, পেপে চাষে তিনি গড়বেন নতুন বাংলাদেশ। কৃষিতে ঘটাবেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন।এর জন্য তিনি আরও জায়গা সম্প্রসারণ করেছেন।  সুজন গোলদার আজ থেকে ৪ বছর আগে মাত্র ২ বিঘার উপর আম বাগান গড়েন । কিন্তু বুঝে উঠতে না পারায় নিয়মিত পরিচর্যায় যত্নশীল না হওয়ায় আম গাছে ব্যাপক আমের মুকুল এলেও ঝরে পড়ে। তার পরও  সুজন গোলদার হাল ছাড়েননি বলেই আজ সফলতা তার দ্বারপ্রান্তে উপণিত। সুজন গোলদারের কুল বাগান দেখতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ জড়ো হন। আর অতিথি আপ্যায়ন করেন কীটনাশক বিহীন ফরমালিন মুক্ত স্বাস্থ্য সম্মত তাজা কুল দিয়ে ।

কুল বাগানে ভালো  ফলনে ডাল নুইয়ে পড়েছে মাটিতে। এ বাগান দেখে উদ্ধুদ্ধ হয়ে শিয়ালকাঠিসহ আরও প্রায় ২০ বিঘা জমিতে তরুণদের আয়ের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া, কোটি টাকার কুল বিক্রির সম্ভাবনার অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে, কচুয়া উপজেলা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান বাসসকে অবহিত করেন ।এ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কচুয়া উপজেলা থেকে বাগানগুলো নিয়মিত তদারকি এবং বিনামূল্যে সার কীটনাশক স্প্রে মেশিন, নেট প্রদান করে সহায়তা করে যাচ্ছেন। কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আবু নওশাদ সুজন গোলদারের বাগান পরিদর্শনে এলে ব্যাপক ফলন দেখে অভিভূত হন এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।এ সময় তরুণ কৃষি উদ্যোগক্তা সুজন গোলদার জানান, তিনি এলাকার মানুষকে আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে চান।এলাকার বেকারদের উদ্ধুদ্ধ করে তারুণ্যের বাংলাদেশ এসো দেশ গড়ি নিজেকে বদলাই পরমুখাপেক্ষী না হতে আত্মকর্মসংস্থানই হোক আগামী দিনের একটি নতুন সুন্দর বাংলাদেশ। উচ্চ শিক্ষিত সুজন গোলদার তারা যেন কখনো বৈষম্যের শিকার না হন।

কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী জানান, এখানকার ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অসচ্ছলতা রযেছে। তারপরও কচুয়ার আবহাওয়া, বলেশ্বর নদীর  মিষ্টি পানির কারনে এখানকার পতিত জমি অনেক উর্বর। তাই মাল্টা, আখ চাষসহ বিভিন্ন কৃষিতে এখানকার চাষীরা খুবই অল্প সময়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এজন্য কৃষিতে সরকার সবসময় ভর্তুকি বিনামূল্যে সার কীটনাশক ধানবীজ ফলের চারা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করছেন।