মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল

বাসস
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৬
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল শনিবার।

মহাকবি মাইকেল যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭৩ সাল থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভিটা যশোরের সাগরদাঁড়িতে তাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন হয়ে আসছে। আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে। 

মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার।

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্ম উৎসব উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের এক ক্ষণজন্মা প্রবাদপুরুষ। 

কালোত্তীর্ণ এ কবি মহাকাব্য, চতুর্দশপদী কবিতা, নাটক ও প্রহসনসহ বাংলা সাহিত্যের বিবিধ শাখায় তাঁর বহুমাত্রিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন এবং সাহিত্যের গঠনশৈলীতে এনেছেন আধুনিকতার ছোঁয়া। 

তিনি বলেন, আধুনিকতার যে ধারা মহাকবি বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তন করেন, তা পরবর্তী কবি ও সাহিত্যিকদের পথনির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে অমিয় তেজ ও ঐশ্বর্যে। দীর্ঘ প্রবাসজীবন সত্ত্বেও মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ তাঁর সৃষ্টিকর্মে সহস্রধারায় উৎসারিত হয়েছে। আমি সকলকে আহ্বান জানাই আমরা যেন মহাকবির স্বদেশ প্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারি।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী। তিনি শৈশবে সাগরদাঁড়ির পাশে শেখপুরা গ্রামের মৌলভী খন্দকার মখমল সাহেবের কাছে বাংলা ও ফার্সি শিক্ষা লাভ করেন। 

১৮৩৩ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুর যান কবি এবং সেখানে লালবাজার গ্রামার স্কুলে ইংরেজি, ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। 

কবি ১৮৩৭ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। ১৮৪২ সালে ইংরেজিতে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ‘স্ত্রী শিক্ষা’ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে কলেজ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন কবি। একইসাথে পিতৃগৃহ থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন। হিন্দু কলেজে পড়তে না পেরে বিশপস কলেজে ভর্তি হন ও গ্রিক ও সংস্কৃত ভাষায় জ্ঞানার্জন করেন তিনি। তিনি ১৮৪৮ সালে সাগরদাঁড়িতে আসেন, তারপর ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজ চলে যান। পথে বসন্ত রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সুস্থ হয়ে সেখানে একটি আবাসিক স্কুলে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছদ্মনামে কবিতা লিখতে থাকেন তিনি। কয়েকটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ও সম্পাদকীয় বিভাগেও কাজ করেন। একই বছর বিয়ে করেন রেবেকা ম্যাকটাভিসকে। 

১৮৪৯ সালের এপ্রিলে ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য কাপটিভ লেডি’ প্রকাশ হয়। 

১৮৫২ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইস্কুল বিভাগে তিনি শিক্ষকতার চাকরি নেন। তিনি ১৮৫৪ সালে দৈনিক স্পেকটেটর পত্রিকায় সহ-সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ওই বছরই বের হয় পুস্তিকা ‘দ্য এ্যাংলো স্যাক্সন এ্যান্ড দ্য হিন্দুু’।

১৮৫৭ সালে তিনি আদালতে দোভাষী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

১৮৫৮ সালে ‘শর্মিষ্ঠা নাটক’ লিখে বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ও নাট্যান্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। 

১৮৬০ সালে ‘পদ্মাবতী নাটক’ প্রকাশ হয়। মে মাসে বাংলা ভাষায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ প্রকাশিত হয়। এবছরই তিনি মহাকাব্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।

১৮৬১ সালে জানুয়ারিতে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়। ফেব্রুয়ারিতে প্রখ্যাত সাহিত্যিক কালিপ্রসন্ন সিংহের বাসভবনে অমিত্রাক্ষর ছন্দে মহাকাব্য রচনার জন্য বিদ্যোৎসাহিনী সভার পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা এবং মহাকবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে ব্যারিস্টারিতে ভর্তি হন।

১৮৬৩ সালে কবি অর্থকষ্টে পড়েন। এ অবস্থায় পরিবারসহ প্যারিসের ভার্সাই নগরীতে চলে যান। ১৮৬৪ সালে ২ জুন অর্থসাহায্য চেয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে চিঠি লেখেন তিনি। আগস্টে বিদ্যাসাগরের পাঠানো টাকা পেয়ে সাময়িকভাবে অভাব মোচন হলে তিনি সনেট রচনায় মনোনিবেশ করেন ও ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে আবার ব্যারিস্টারি পড়া শুরু করেন।

১৮৬৬ সালের আগস্টে ‘চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী’ পুস্তক আকারে কলকাতা থেকে বের হয়। নভেম্বরে ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৬৭ সালে পুত্র-কন্যাকে ফ্রান্সে রেখে কলকাতা চলে আসেন। সেখানে হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করার জন্য আবেদন করেন।

১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বেলা ২টায় মারা যান মহাকবি মধুসূদন দত্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পল্টন ট্রাজেডি উপলক্ষে ছাত্রশিবিরের আলোচনা সভা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী
দুদকের অভিযান : স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ভূমি খাতে অনিয়ম উদঘাটন
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে পাকিস্তান সফরে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী
চট্টগ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবদল কর্মী নিহত
রাজধানীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডামি পিস্তলসহ ৯ জন গ্রেফতার
রাবির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন
খুলনায় দুর্ঘটনা রোধ ও যানজট কমাতে সচেতনতামূলক র‌্যালি
এআই ব্যবহারে গতি আনতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপদানে ৮০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের
বিদ্যুৎ আমদানির অর্থ পরিশোধে নিয়ম শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ড্যাবের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন
১০