বাসস
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫১

প্রান্তিক মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে রোবট বানালেন দশম শ্রেণীর ছাত্র মৃদুল 

স্বল্পব্যয়ে রোবট তৈরি করেছেন কুষ্টিয়ার স্কুল ছাত্র মৃদুল। ছবি ;বাসস

আব্দুর রাজ্জাক

কুষ্টিয়া, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে স্বল্পব্যয়ে রোবটতৈরি করেছেন কুষ্টিয়ার স্কুল ছাত্র মৃদুল। শুধু তাই নয়, কোনোরকম কমান্ড ছাড়াই মৌখিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেবা দেবে তার তৈরি এই রোবট লিন্ডা ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, জ্বর মাপাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ দেবে এই রোবোট। নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে মাদক ব্যবহার ও অগ্নিকান্ডের সতর্কতাও দেবে রোবটটি। 

জেলার সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রাম নিবাসি আতিকুজ্জামান মুকুল ও  আজমিরা আক্তার মীরা দম্পতির একমাত্র পুত্র ফাহাদ ফারদিন মৃদুল (১৭) কুষ্টিয়ার দিনমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর ছাত্র। সম্প্রতি গ্রামীণ জনপদে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে রোবট তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন।   

বাসস’র সাথে আলাপকালে মৃদুল বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার বিজ্ঞান পড়তে ভালো লাগে। তখন থেকেই কাগজ বা প্লাষ্টিক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানিক ছোটখাটো যন্ত্র তৈরি করতাম।  পড়াশোনার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক আবিস্কার চিন্তায় সময় দিতাম। 

তিনি জানান, ২০২৪ সালে ছুটিতে নানার গ্রামে বেড়াতে যান। হঠাৎ মৃদুলের নানী অসুস্থ হলে গ্রামের মধ্যে চিকিৎসক সংকট থাকায় সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন তার নানী। এই ঘটনা থেকেই  রোবট তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। বাবা মায়ের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবায় রোবট তৈরি করেন মৃদুল। রোবটটির নাম রেখেছেন জড়নড়ঃ খরহফধ। প্রথমবারের মতো রোবটটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মত। বর্তমানে এ রোবটের সাহায্য হরিশংকরপুর গ্রামের অনেকেই চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।  

এই রোবট দেখতে আশপাশ সহ কয়েকটি অঞ্চলের ছোট থেকে বড় সবাই এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন। 

রোবট লিন্ডা কিভাবে স্বাস্থ্যসেবা  দেবে জানতে চাইলে মৃদুল জানান, কোন ব্যক্তি রোবটের সুইচ অন করে যদি বলে,আমার ব্লাড প্রেশার মেপে দাও, সে ব্লাড প্রেশার মাপবে। যদি জ্বর মাপতে বলা হয় জ্বরও মাপবে। জ্বর বেশি হলে কি কি করতে হবে তার প্রাথমিক পরামর্শগুলোও দেবে। 

মৃদুল বলেন, প্রথম বানিয়েছি তাই কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। এটি এখন ইংরেজি কমান্ড শোনে। আস্তে আস্তে সে বাংলা বুঝতে ও বলতে পারবে। রোগির অবস্থা বেশি খারাপ দেখলে রোবট তার এডমিনকে বার্তা পাঠাবে। 

এমনকি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ফোন করার সক্ষমতাও অর্জন করবে। 
মৃদৃল আরো জানান, এই রোবটটি বর্তমানে তার দুই মিটারের মধ্যে কেউ মদ্যপান বা ধুমপানের মতো মাদকে আসক্ত হলে সতর্ক করতে পারে। অগ্নিকান্ডেও সতর্ক করতে পারে। তবে ধীরে ধীরে এর ফ্রিকোয়েন্সি দুই কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ‘রোবট লিন্ডা’-কে সচল রাখতে যে চার্জ প্রয়োজন বিদ্যুৎ, ব্যাটারি, সৌরতাপ ও লবণ পানি থেকে তা মেটানো সম্ভব। বিদ্যুৎ না থাকলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাটারির মাধ্যমে সাত থেকে আট ঘন্টা চলতে পারবে। ব্যাটারির চার্জও যদি ফুরিয়ে যায় তাহলে দিনের বেলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূর্যের আলো থেকে শক্তি সঞ্চয় করবে। আর যদি রাতের বেলা চার্জ চলে যায় তাহলে লবণ পানি থেকে চার্জ নিতে পারবে।    

মৃদুল বলেন, এই রোবটটি প্রথমবারের মতো বানানোয় কিছু ভুল-ত্রুটি হওয়ায় খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। 

কিন্তু এটি বানাতে ২০ হাজার টাকার বেশি লাগবে না। সরকারি বা অন্যকোন সংস্থার সহযোগিতা পেলে এডভান্স টেকনোলজি ও আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে গ্রামের কৃষকদের চিকিৎসা সেবা দিতে রোবট লিন্ডা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। 

ছেলের এ ধরনের কাজগুলো দেখে প্রথমে বকাঝকা করতেন বাবা ও মা। পরে তার এই রোবট তৈরিতে অবাক হয়েছেন তারা । সন্তানের এমন সাফল্যে তারা এখন খুব খুশি। তারা গর্ববোধ করেন এমন একজন সন্তানের বাবা-মা হিসেবে। 

দিনমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনিসুর রহমান বাসসকে বলেন, মৃদুলের মেধা বিকাশের জন্য যদি  সরকার বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠান তার পাশে এগিয়ে আসে তাহলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। জনসংখ্যা অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা অনেকটা কম। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য শহর ও গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় যদি এই রোবট দেওয়া যায় তাহলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।