সুনামগঞ্জের প্রথম মুক্তাচাষী নাজিম উদ্দিন জেলার তরুণ উদ্যোক্তাদের মডেল হয়ে উঠেছেন

বাসস
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫৫
সুনামগঞ্জ জেলার প্রথম সফল মুক্তাচাষী নাজিম উদ্দিন। ছবি : বাসস

// মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী //

সুনামগঞ্জ, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার প্রথম সফল মুক্তা চাষি নাজিম উদ্দিন মুক্তা চাষে সাফল্য অর্জন করে এখন জেলার তরুণদের কাছে মডেল হয়ে উঠেছেন। প্রথমে সাফল্য না এলেও অনেক ধৈর্য্য আর আন্তরিক চেষ্টায় তিনি আজ সফল। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে প্রশিক্ষণ, বিনিয়োগ, চেষ্টা ও আত্মবিশ্বাস তাকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে।  

জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর গ্রামের কৃষক মৃত হাজী মশ্রব আলী তালুকদার ও গৃহবধু বিবি আলেকজান দম্পতির পুত্র নাজিম উদ্দিন (৫৫)। তিনি সাত ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। কাজ করতেন স্থানীয় একটি এনজিওতে। 

মুক্তাচাষী হয়ে ওঠার গল্প

এনজিওর চাকরি আর বাবার কৃষিজমিতে কাজ করেই চলছিলো নাজিম উদ্দিনের। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ইউটিউবে মুক্তা চাষের ভিডিও দেখে তিনি প্রথম মুক্তা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তিনি জেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু জেলা মৎস্য অফিস জানায় তারা মুক্তা চাষে পারদর্শী নয়। তারা তাকে ময়মনসিংহ মুক্তা চাষ প্রকল্পের মোবাইল নম্বর দেয়। ওই নম্বরে ফোন করে নাজিম উদ্দিন সেখান থেকে মুক্তা চাষের ওপর ৫ দিনের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৯ সালের প্রথম দিকেই মুক্তা চাষ শুরু করেন। প্রথমবারের মতো এক লাখ টাকা পুজি নিয়ে ১০ শতক জমিতে পুকুর তৈরি করে মুক্তা চাষ করেন। 

কিন্তু প্রথমবার মুক্ত চাষে সফল হতে পারেননি নাজিম। এরপর তিনি আবার যোগাযোগ করেন ময়মনসিংহ মুক্তা চাষ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে। ওই প্রকল্প থেকে দুইজন কর্মকর্তা আসেন নাজিমের বাড়িতে। তারা সরেজমিনে দেখিয়ে দেন কিভাবে মুক্তা চাষ করতে হয়। এরপরই মুক্তা চাষে সফল হন তিনি। প্রথম দফায় ২০১৯ সালের শেষ দিকে ৫২০ টি ঝিনুক অপারেশন করে ২৭০টি মুক্তা পান নাজিম। এগুলোর প্রতিটি তিনি সাড়ে পাঁচ’শ টাকা করে প্রায় দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেন। 

মুক্তা চাষে সফল হওয়ার পর তিনি আলাদা পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। এসময় তিনি দুই হাজার ঝিনুক ও ১১ টি পুকুরে মাছের চাষ করেন। কিন্তু আবারো তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হন । ২০২২ সালের বন্যায় তার দুই হাজার ঝিনুক ও ১১টি পুকুরের মাছ ভেসে যায়। তখন তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। 

বাসসের সাথে আলাপকালে নাজিম উদ্দিন বলেন, এসময় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) সহায়তা করতে এগিয়ে আসে। তাকে মাছের পোনা ও খাদ্য এবং সাড়ে তিন হাজার ঝিনুক বিনামূল্যে প্রদান করে। তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।

অবশেষে এলো সফলতা

সরেজমিনে নাজিম উদ্দিনের মুক্তার পুকুরে দেখা যায়, পানির ভেতরে জাল বিছিয়ে একধরনের ঘের তৈরি করা হয়েছে। তার সারি বেঁধে ভেসে আছে প্লাস্টিকের বোতল। এসব বোতলে বিশেষ পদ্ধতিতে ঝিনুক স্থাপন করা হয়েছে। নাজিম উদ্দিন জানান, ঝিনুক স্থাপনের সাত মাস পর থেকেই ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা তৈরি হয়। কিন্তু সেগুলো অপরিপক্ক থাকে। কোনো কাজে লাগে না। তবে ১৪ মাস পর এগুলো পরিপূর্ণ হয়। এগুলোর দামও ভালো পাওয়া যায়।  

নাজিম উদ্দিনের মুক্তার খামারনাজিম উদ্দিন জানান, বর্তমানে ৩৩ শতক জমিতে পুকুর (ঝিনুক চাষের জন্য গভীর পানির প্রয়োজন হয়না) তৈরি করে তাতে ঝিনুক চাষ করছেন। তার এই পুকুরে ৩ হাজার ঝিনুক রয়েছে। ২০২৬ সালের মার্চ মাসে ঝিনুক অপারেশন করে মুক্তা বের করা হবে। তিনি আশা করছেন কমপক্ষে আড়াই হাজার মুক্তা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ২৪ বিঘা জমিতে ১১টি পুকুরে মাছের চাষ করেছেন। এতে রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ চাষ করেছেন। বর্তমানে তিনি ১১ জন প্রশিক্ষিত কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া ৯টি চৌবাচ্চায় রঙ্গিন মাছ (একুরিয়ামে মাছ) চাষ করছেন। এথেকে সব খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন বলে জানান নাজিম উদ্দিন। 

তিনি আরও জানান, ফাও গত বছর নাজিম উদ্দিনের খামারে সুনামগঞ্জ জেলার ২৫ জন এবং ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলার ২৫ জন যুবককে মুক্তা চাষের ওপর ৭ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন প্রশিক্ষিত কর্মী নাজিমের মুক্তা চাষ প্রকল্পে কাজ করেন।

অন্য পরিচয়ে নাজিম উদ্দিন

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধিনে নিবন্ধিত ‘রুরাল পভার্টি ওয়েলফেয়ার ইউথ সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠনের প্রধান নির্বাহী। এই সংগঠনের মাধ্যমে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহায়তায় তিনি যুবকদের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান ও অন্যান্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করেন।

সুনামগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহ নূর আলম বাসসকে বলেন, নাজিম উদ্দিন একজন সফল মুক্তা ও মাছ চাষী। এক কথায় তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। সুনামগঞ্জে নাজিম উদ্দিন প্রথম মুক্তা চাষী ও বাণিজ্যিকভাবে একজন একুরিয়াম ফিস চাষী। নিজের প্রচেষ্টায় নাজিম উদ্দিন মুক্ত চাষে তরুণদের জন্য একজন মডেল হয়ে উঠেছেন।

ব্যক্তি জীবন

স্থানীয় কওমি মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাশ নাজিম উদ্দিন ব্যক্তি জীবনে চার কন্যা সন্তানের জনক। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেজো মেয়ে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে, সেজো মেয়ে পাগলা সরকারি স্কুল এণ্ড কলেজে এবং ছোট মেয়ে শান্তিগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসায় পড়া লেখা করে। তার স্ত্রী একজন গৃহবধু। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নীলফামারীতে ১২ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান
তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রে দু’টি গভীর অনুসন্ধান কূপ খননের উদ্যোগ
ইতালির নাগরিকত্ব পাচ্ছেন জনপ্রিয় মার্কিন লেখক ফ্রান্সেস মায়েস
কিশোরগঞ্জে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের চারলাখ টাকা জরিমানা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘বিশ্ব হিমোফিলিয়া’ দিবস পালিত
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পর বিমানের কার্গো সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বাংলাদেশ
রাজশাহীতে মেয়েকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা : মামলার দুই আসামী আটক
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট পরিসংখ্যান
শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে বহিষ্কার ৮ শিক্ষার্থী, প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রদলের
১০