বাসস
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:২২

অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত আত্রাই নদীর দুই ধার  

অতিথি পাখির  কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত আত্রাই নদীর দুই ধার । ছবি ; বাসস 

নওগাঁ, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : এ শীতে হাজারো  অতিথি পাখির  কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বুকচিরে প্রবাহিত হয়েছে আত্রাই নদী। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে নদীর দুই ধার। আর নদীর স্বচ্ছ পানিতে চলে পরিযায়ী পাখির জলকেলি। তাদের আগমনে প্রকৃতি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এ পরিযায়ী পাখিরা ঋতুচক্রের পালাবদলে হাজার হাজার মাইল পথ পেরিয়ে উড়ে এসেছে এখানে। বিশেষ করে রাঙা ময়ূরি আর বালিহাঁসের দিনভর খুঁনসুটিতে নদীতে সৃষ্টি হয়েছে এক নান্দনিক পরিবেশ। আর পাখি ঘিরে এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি স্থানীয়দের।

এ শীত মৌসুমে বালি হাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাত চোরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ এ নদীতে। এছাড়া পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেংজা হাঁস, বালি হাঁস, পাতিকুট, শামুক খোল, পানকৌড়িসহ ১৫ জাতের দেশি পাখির দেখা মিলবে এখানে। এসব পরিযায়ী পাখি কখনও জলে ভাসতে থাকে আবার কখনও দল বেঁধে ওড়ে নদীর চারপাশে। এক সাথে ওঠানামা করতে গিয়ে পা আর পাখার ঝাপটায় চারদিকে ছিটকে পড়া পানিতে সৃষ্টি হয় এক অপরূপ দৃশ্য।

সরেজমিনে গতকাল রোববার সকালে আত্রাই নদীর কুঞ্জবন ব্রীজে কথা হয় শিক্ষার্থী টুম্পা, খলিল ও পরিমনির সঙ্গে । তারা বাসস’কে জানালেন, প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় অতিথি পাখিদের পাখা ঝাপটার শব্দ শুনতে খুব ভালো লাগে। হাজার হাজার পাখি প্রতিদিন নদীর বাঁশগুলোতে থাকে। শুধু আমরা নয়; প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীরা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ ও জলকেলি দেখতে আসে। খুব সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ।

নওগাঁ শহর থেকে পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থী ওমর ফারুক ও আরিফুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে আবার কেউ বসে আছে বাঁশের উপর। এ দৃশ্য না দেখলে কাউকে বুঝানো সম্ভব হবে না। তাই এলাকাটি যদি পাখির অভয়ারণ্য  হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলে এখানে পরিযায়ী পাখি আরো বেশি করে আসতো। এসব পরিযায়ী পাখিকে ঘিরে এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি তাদের।

পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থী স্মৃতি ও আল সাবাহ স্বর্ণ বাসস’কে বলেন, শুধু পরিযায়ী পাখির নামই শুনেছি কিন্তু দেখা হয়নি। এখানে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখতে খুব লাগছে। অসাধারণ দৃশ্য! এখানে সকালে এসে পাখি দেখে মনটা ভরে গেল। তবে এসব পাখিদের রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

নওগাঁর জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান বাসস’কে বলেন, প্রতি বছর শুধু আত্রাই নদীতে নয়; জবই বিলে, দিবর দিঘী, আলতাদিঘীতেও হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কম। কারণ এবার শীত কম। তারপরেও এবার ২৫-৩০ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে।

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলী বাসস’কে বলেন, আত্রাই নদী, জবই বিল, দিবর দিঘী ও আলতাদিঘীতে মাছ শিকার করার কারনে পাখিদের অবাধ বিচরণ যেন বাঁধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য করা হচ্ছে সব সময়। এছাড়া এসব স্থানে কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সেজন্য মৎস্য অফিসের সব সময় তদারকি রয়েছে।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বাসস’কে বলেন, পরিযায়ী পাখি শীতকালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। যাদের উপস্থিতিতে প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। নির্দিষ্ট সময়ের পর এ পাখিগুলো আবার নিজ স্থানে চলে যায়। পরিযায়ী পাখি আমাদের কোন ক্ষতি করে না। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পাখি শিকার করা হয়। এসব বিষয়ে জনগণকে সচেতন হতে হবে। তাই জেলা প্রশাসন থেকে পরিযায়ী পাখি রক্ষায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।