বাসস
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:০৪

রংপুরে ফুল চাষে সফল উদ্যোক্তা আব্দুর রশিদ

রংপুরে আব্দুর রশিদ আজ সফল। ছবি ; বাসস

 মো. রেজাউল করিম 

রংপুর, ১২ ফেব্রয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন আব্দুর রশিদ (৩৬)। 

অনেক কষ্ট ও চেষ্টার পরেও মেলেনি চাকরি। অর্জন করতে পারেননি অর্থ উপার্জনের পথ। নানা কিছু ভেবে যখন দিশেহারা রশিদ তখন মাথায় আসে  নার্সারি করার চিন্তা। 

একটা সময় নার্সারির প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে তার। ৪০ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে সে লাখপতি। বাহারি ফুলের চাষ বদলে দিয়েছে তার জীবন। বিদেশি ফুল লিলিয়াম চাষে রংপুরে এই প্রথম সফল হয়েছেন তিনি। রংপুর নগরীর বুড়িরহাট ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। রশিদের ফুলের বাগানে নানা জাতের  প্রায় তিনশতাধিক ফুল রয়েছে। নার্সারিতে থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন ফুল ও অন্যান্য চারা তিনি বিক্রি করছেন। 

বিদেশি জাতের লিলিয়াম ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। এই মৌসুমে বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৭০০ লিলিয়াম। 

একইসাথে জাতভেদে বাহারি গোলাপ, গ্লাডিওয়ালাস, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদাসহ নানান জাতের ফুল চাষ করে সফল এই উদ্যোক্তা। মাসে আয় করছেন ৪০ হাজার থেকে লাখ টাকা। তার নার্সারিতে শ্রমিক রয়েছে ৮ জন,পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন নারী শ্রমিকরা। তার দেখাদেখি ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অন্যরাও। বেকারত্বকে না বলে তার এই উদ্যোগে খুশি আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

আব্দুর রশিদের প্রতিবেশী চাচা বলেন, সবাইতো শুধু চাকরির পেছনে ছুটে, মোর ভাতিজা ওইলা আশা বাদ দিয়া ভাল কাম করছে ফুলের গাছ নাগেয়া। হামরাও আইসি ফুল দেখতে ভাল নাগে, ঘ্রানে চারোপাকে ভরা মেলা মানুষ আইসে। হামরা খুব খুশি ফুল দিয়া করি মিলে খাউক। কিন্তু এলা অনুষ্ঠান বেশি নাই এইজইনতে কামাই কম হয়ছে, নাতে আরও ভাল লাভ হইল হয়।

নার্সারিতে প্রবেশ মাত্রই মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে বাহারি রংয়ের নজরকাড়া গোলাপ, সুগন্ধে চারিদিকে ছুটছে মৌমাছি। এরইমধ্যে গাছের যত্ন নিতে দৈনিক ব্যস্ত সময় পার করেন আব্দুর রশিদ। এছাড়াও চারিদিকে শোভা পাচ্ছে নেদারল্যান্ডসের আকর্ষণীয় ফুল লিলিয়াম। গ্লাডিওলাস দেখেই মুগ্ধ হচ্ছেন যে কেউ। দূর থেকে শুভ্রতা  ছড়াচ্ছে পামফুল ও জিপসি। এই ফুল চাষের যথাযথভাবে বাজারকরতে পারলে অধিক লাভজনক। যার প্রতিটি স্টিক পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা আর খুচরা বিক্রি হয় দেড়শ-দুইশ টাকার বেশি। তিনি জানান, মাত্র ৫ শতক জমিতে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে লিলিয়াম চাষ করে তিন মাসে ৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

সফল উদ্যোক্তা আব্দুল রশিদ বাসস কে বলেন, লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য অনেক ঘুরেছি। পরে বাধ্য হয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু ফুল চাষ। বর্তমানে অনেক ভালো আছি। এখন আমার এখানে ৮-১০ জন মানুষ কাজ করে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে হাজার হাজার চারা নিয়ে ফুলের সমাহারে নিজের একমাত্র অবলম্বন করতে চাই। পরিবার নিয়ে বেশ ভালো আছি। তবে বর্তমানে অনুষ্ঠান কম থাকায় ফুলের চাহিদা কিছুটা কম। এই প্রথম আমার হাতে লিলিয়াম সফল। বিনামূল্যে চারা পেয়ে সফল হয়েছি এবং বেশ লাভবান হয়েছি।

ফুল চাষে লাভজনক হওয়ায় লিলিয়ামের পাশাপাশি গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকা ও নানা প্রজাতির গ্লাডিওলাস ছাড়াও ধান,সবজিও চাষ করেন তিনি। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করছেন বলে জানান আব্দুর রশিদ।

গবেষকরা জানান, রংপুর তামাকের আগ্রাসী অঞ্চল হলেও এখানকার মাটি ফুল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দুর্লভ লিলিয়াম হতে পারে ভাগ্যবদলের হাতছানি। আর তাই লিলিয়াম চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করে এই অঞ্চলে ফুল চাষির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাসস কে জানান, আমরা প্রতিটি গ্রামে যুবকদের নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি, বলছি বসে না থেকে নিজেই উদ্যোক্তা হও। বাগানসহ অন্যান্য কাজ করো আমরা সহায়তা করব। আমরা রশিদকে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। রশিদকে দেখে অনেক যুবক নার্সারি করার কথা ভাবছে। চাকরির পিছনে  না ঘুরে প্রতিদিন রংপুরে সৃষ্টি হচ্ছে উদ্যোক্তা। এটি ভালো উদ্যোগ।