সিলেট, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): সিলেটে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় চার আসামিকে ৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রামাণিক এই রায় ঘোষণা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. জাহিদুল ইসলাম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মিসবাহ উদ্দিন ওরফে রবিন চৌধুরী, স্ত্রী শাহিদা বেগম শান্তি, বিয়ানীবাজার উপজেলার ছোট দেশের আব্দুল খালেক ওরফে মাখন উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণের উত্তর রায়গড় গ্রামের বাসিন্দা, মিসবাহ উদ্দিন ওরফে রবিন চৌধুরীর শ্যালক রিপন সিরাজ।
এর মধ্যে মিসবাহ উদ্দিনকে আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, স্ত্রী শাহিদা বেগম শান্তি, শ্যালক রিপন সিরাজ ও আব্দুল খালেক ওরফে মাখন উদ্দিনকে চার বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
অর্থদণ্ড পরিশোধের জন্য আগামী বছরের ডিসেম্বরের ১২তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রত্যেককে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এর মধ্যে শাহিদা বেগম শান্তি পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে প্রেরিত একটি পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মিসবাহ উদ্দিনের বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগের কথা বলা হয়। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স ইনটেলিজেন্স ইউনিট অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিসবাহ উদ্দিন মর্টগেজ ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ একাধিক ব্যাংক শাখার মাধ্যমে দেশে এনে বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় তার নিজের নামে, স্ত্রী শাহিদা বেগম শান্তি ও বাবা আবদুর রহিমের নামে টাকা স্থানান্তর করেন এবং পরে তা এফডিআর, বিনিয়োগ, এসওডি ঋণগ্রহণ, শেয়ার ক্রয়, ফ্ল্যাট ক্রয়, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে হস্তান্তর করেন। যা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ। এই ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক মামলাটি দায়ের করে।
মামলাটি তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা’র উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পাঁচজন আসামির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামি আব্দুর রহিমের মৃত্যুজনিত কারণে তার নাম বাদ দেওয়া হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এই রায় দেন বিচারক।
দুর্নীতি দমন কমিশন আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, দুদকের করা মামলার রায়ে আজকে আসামিদের ৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। যা এ যাবৎকালের সিলেটে সবচেয়ে বড় অর্থদণ্ড। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিউকিউটর ইবনে আলী মো. লুৎফুল কিবরিয়া শামীম।