শিরোনাম
॥ জাকির মোস্তাফিজ মিলু ॥
ঠাকুরগাঁও, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে মানসম্মত আলু উৎপাদিত হওয়ায় বিশ্ববাজারে এ জেলার আলুর কদর বেড়েছে। জেলার কৃষকদের আবাদ করা আলু দেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে উন্নত দেশগুলোতে। কৃষিনির্ভর জেলা ঠাকুরগাঁও বরাবরই ধান, গম, পাট, আখ, আম উৎপাদনে সমৃদ্ধ। আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিয়মিত বাজার তৈরি হলে এ জেলার অর্থকরী ফসলের তালিকায় আলুও যুক্ত হবে।
চলতি মৌসুমে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে এখানকার আলু রফতানি শুরু হয়েছে। প্রতিনিয়ত তাকে আরও ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখন উচ্চমানের আলু উৎপাদনে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে জেলায় ২৬ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। ভালো লাভ হওয়ায় চলতি মৌসুমে আলুর আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫’শ ৫৫ হেক্টর জমিতে। এদিকে জেলার সদর উপজেলায় গত বছর ১৪ হাজার ২’শ ৭০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। এ বছর আলুর আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ১’শ ৭৫ হেক্টর জমিতে।
সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে শুধু এই উপজেলা থেকেই ১’শ ১৫ মেট্রিক টন গ্র্যানোলা জাতের আলু নেপালে রফতানি হয়েছে। সানশাইন জাতের ৪৫ মে: টন আলু রফতানি হয়েছে মালয়েশিয়াতে। এ জেলার ‘নাইম এগ্রো’ কোম্পানি মালয়েশিয়াতে আলু রফতানি করছে ।
নাইম এগ্রো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আল ইমরান বাসসকে জানান, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার আলু চাষিদের মধ্যে সানশাইন জাতের আলু চাষের উদ্যোগ সফল হয়েছে। এর গুণগত মান আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদৃত হচ্ছে।
বর্তমানে স্থানীয় বাজারে আলুর দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকার মধ্যে থাকলেও বিদেশে রফতানির ফলে প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ১৭ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা কিছুটা হলেও লাভবান হচ্ছেন। তবে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে গড়ে ২০ টাকা খরচ হচ্ছে, যা এখনো কৃষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের কৃষক কাজল বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, আমরা এতদিন শুধু দেশীয় বাজারে আলু বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে শুনে আমরা খুবই খুশি। এতে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে। আর আমাদের উৎপাদনও বাড়বে।
পীরগঞ্জের কৃষক জামাল হোসেন বলেন, আমাদের উৎপাদিত আলু যদি ভালো দামে বিদেশে যায়, তাহলে আমরা আরও বেশি আলু চাষে আগ্রহী হবো। তবে উৎপাদন খরচ কমানো গেলে লাভ আরও বেশি হবে।
সদর উপজেলার খেকিডাঙ্গির কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, আমাদের এলাকায় বিদেশে রফতানির উপযোগী আলু হচ্ছে এ বিষয়টিতে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যপক সাড়া পড়ে গেছে। মানুষ উৎসাহের সাথে এটা লক্ষ্য করছেন এবং তারা কিভাবে বিদেশে রফতানি উপযোগী আলু উৎপাদন করবেন তা নিয়ে ভাবছেন। কেউ কেউ চাষও করেছেন। তবে স্থানীয় আলুর বাজার নিয়ে তারা চিন্তিত।
দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও থেকে আলু রফতানির কাজে যুক্ত নাঈম এগ্রোর সিইও আল ইমরান বলেন, আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত আলুর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য বড় সুখবর। আমরা কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করছি, যাতে তারা ভালো দাম পান এবং রফতানির জন্য মানসম্মত আলু সরবরাহ নিশ্চিত হয়।
জেলার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিরুল আলম বাসসকে বলেন, জেলার কৃষকরা এখন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আলু উৎপাদন করছেন। এতে মান বজায় থাকছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। কৃষকরা যাতে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ পান, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।
সরেজমিনে কৃষক হুমায়ুনের আলু খেতে আলু উত্তোলন ও প্যাকেটজাতকরণ কার্যক্রম পরিদর্শনকালে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাসসকে বলেন, এটা আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে বিরাট সসম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। জেলার কৃষি বিভাগ নিবিড়ভাবে এই বিশেষ জাতের আলুর উৎপাদন, উত্তোলন ও আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী করে প্যাকেটিং করাসহ সব কাজে কৃষকের পাশে আছে।
তিনি বলেন, এই বিশেষ জাতের আলু চাষের সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য কৃষকদের উৎসাহ ও বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে। কৃষকরাও এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। যদিও এবারের আলুর বাজারে দাম কম নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বলে আমরা খবর পাচ্ছি। তবে সার্বিকভাবে, এটা ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য অত্যন্ত সুখবর।