ঢাকা, ২৫ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ সুনিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডার, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইআরএফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘এলডিসি গ্রাজুয়েশন : কৃষি খাতের উপর প্রভাব, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএমএ) যৌথভাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএএমএ সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডি৮ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মহাসচিব আশরাফুল হক চৌধুরী।
লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়া আমাদের জন্য বিকল্প নয় বরং আমাদের এটি করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে, আমাদের পেটেন্ট মান এবং কমপ্লায়েন্টের মান বাড়ানোর দরকার হবে।
এলডিসি উত্তরণ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ এখনও 'অপেশাদার গ্রুপ আছে উল্লেখ করে বিশেষ দূত বলেন, বাংলাদেশেকে এলডিসি উত্তরণে 'পেশাদার গ্রুপে’ খেলার জন্য যথাযথ ফিটনেস থাকা এবং প্রয়োজনীয় অনুশীলন করা প্রয়োজন। যদি আমরা সময় নষ্ট করি, তাহলে আমরা অপ্রস্তুত থাকব। যদি আমরা এটিকে ঘুরিয়ে দিই, তাহলে আমাদের সামনে অনেক সুযোগ থাকবে, বিশেষ করে ভূ-রাজনৈতিক প্রবণতা বিবেচনা করে আমরা ইকোনমিক হাব হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা যখন পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের কথা ভাবছি। তখন অনেক দেশই আমাদের সাথে আলোচনা করছে, তাদের ইন্ডাস্ট্রিকে রিলোকেট করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ থাকা উচিত। আমাদের একসাথে এগিয়ে যেতে এক সিস্টেমে এক বাংলাদেশ হিসেবে। আমাদের শ্রম মান, পরিবেশগত মান, সবুজ প্রশংসাপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যত বেশি সবুজ হব এবং প্রশংসাপত্র প্রদর্শন করব, ততই স্বল্পোন্নত দেশ পরবর্তী সময়ে আমাদের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়বে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশকে ‘সিন্ডিকেট’-এর কবল থেকে মুক্ত করা।
তিনি বলেন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যেখানে তাকায় যেখানেই ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি চোখে পড়ে। আমরা চেষ্টা করছি এটা দূর করার জন্য। কারণ বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা থাকা উচিত।
বিশেষ দূত বলেন যে ‘সিন্ডিকেট’ এবং ‘নেক্সাস’-এর সাথে তাদের মোকাবেলা করতে হবে যেখানে অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারেরও প্রয়োজন উল্লেখ করেন। গত কয়েকদিন ধরে বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অত্যন্ত মনোযোগী ছিলেন। এর ফলে সুফলও মিলছে।
দেশের ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করে লুৎফে বলেন, ব্যবসা করার সহজতা আরও উন্নত করা হলে এবং বিদ্যমান বাজার অর্থনীতিকে আরও বাজার অর্থনীতিতে পরিণত করা গেলে বাংলাদেশ দুবাই এবং সিঙ্গাপুরের মতো একটি হাবে পরিণত হতে পারে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও দক্ষ করে তোলার জন্য কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা চেষ্টা করছি। চুড়ান্তভাবে আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা । এ জন্য আমরা অত্যন্ত তৎপর।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা চীনে যাচ্ছেন, তার মূল ফোকাস— চীনা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা, যারা বৈশ্বিক বাজারে প্রভাবশালী।’
প্রধান উপদেষ্টা শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৈঠকই নয় বরং চীনের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও বিশেষভাবে আলোচনা করবেন। ‘বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। চীনা উদ্যোক্তারা এ দেশে এসে কারখানা স্থাপন করুন এই বার্তা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করতে চান। এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য তিনি কাজ করছেন। তবে কিছু বাধা রয়েছে, সেগুলো কীভাবে দূর করা যায়, সেই পরিকল্পনাও চলছে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘সরকার শুধু পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অন্যান্য খাতেও রফতানি বাড়াতে চায়। এজন্য হালাল মাংস ও অন্যান্য হালাল পণ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং হাব গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য প্রতিযোগিতা চলছে। বাংলাদেশ যেন এর সুবিধা নিতে পারে, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি ভিত্তি গড়ে দেবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্দর সক্ষমতা বাড়ানো সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন এর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যেন বাণিজ্য আরও সহজ হয়।’