ঢাকা, ২৫ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ উত্থাপিত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ খণ্ডন করেছে মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানী ইউনিট।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করে যে, বাংলাদেশে অতীতের মতোই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
১২ মার্চ, ২০২৫ তারিখের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ কথা বলা হয়েছে।
এই দাবির সমর্থনে, পরিষদ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মোট ৯২টি সহিংসতার ঘটনা তালিকাভুক্ত করেছে। এগুলোর মধ্যে ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসে এগারোটি হত্যাকাণ্ডও রয়েছে।
তবে, মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানী ইউনিটগুলো থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায় যে, প্রকৃত পরিস্থিতিকে পরিষদ থেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এ দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, এই ঘটনাগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত ছিল না। বরং, এই মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো ঘটেছে পূর্ব শত্রুতা, চুরি, পারিবারিক বিরোধ ও বেপরোয়া আচরণের মতো বিভিন্ন কারণে।
নিচে এই ঘটনার কিছু বিবরণ দেওয়া হল:
১. গাইবান্ধায়- চুরি হওয়া টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সহযোগীদের হাতে দিপলু সরকার খুন হন।
২. নেত্রকোনায়- দিলীপ কুমার সাহা রায়কে তার বাড়িতে অজ্ঞাত আততায়ীরা খুন করে। ঘটনার সময় তার পরিবারের সদস্যরা অনুপস্থিত ছিল।
৩. ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে রাজীব তালুকদারকে হত্যা করা হয়।
৪. সুনামগঞ্জে- রাস্তা পার হওয়ার সময় অজ্ঞাত মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গীতা রানী দাস মারা যান।
৫. বান্দরবানে- ছাগল নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়ার পর অজ্ঞাত আততায়ীরা উমেপ্রু মারমাকে তার বাড়ির বাইরে গুলি করে হত্যা করে।
৬. চাঁপাইনবাবগঞ্জে- অটোরিকশা চালক শ্রী পলাশের রিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় অপরাধীরা তাকে হত্যা করে।
৭. মৌলভীবাজারে- দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে শ্রী দীপেন মুন্ডাকে খুন করা হয়।
৮. পরিবারের মধ্যে ঝগড়ার পর কানাই শব্দকরের মৃত্যু হয়।
৯. রহস্যজনক পরিস্থিতিতে একটি চা বাগানে কানাই পাশির মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
১০. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে পূর্ববর্তী সংঘাতের সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাত আততায়ীরা গুলি করে হত্যা করে।
১১. নারায়ণগঞ্জে- অজ্ঞাত ব্যক্তিরা উৎপল রায়ের বাড়িতে ঢুকে ১,৫০,০০০ টাকা লুটে নেওয়ার সময় তাকে হত্যা করে।
এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে, মৃত্যুগুলো মূলত ব্যক্তিগত বিরোধ, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা দুর্ঘটনার ফলে হয়েছিল, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে নয়।
দুর্ভাগ্যবশত, এটিই প্রথমবার নয়। এর আগেও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই ধরনের ঘটনা ভুলভাবে প্রকাশ করেছে। বারবার তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন সম্পর্কে বিতর্কিত দাবি করেছে। কিন্তু যখন সত্য ঘটনা তাদের সামনে প্রকাশ পায়, তখন তারা তাদের বিভ্রান্তিকর প্রকাশনা সংশোধন করতে অস্বীকৃতি জানায়।
এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে যত্ন সহকারে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এটাও নিশ্চিত করা উচিত যে, নির্দিষ্ট এজেন্ডা পূরণের লক্ষ্যে তথ্যগুলো বিকৃত করা হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, এই ঘটনার আসল ও জটিল প্রকৃতি ব্যাপক সাধারণীকরণের দ্বারা ঢেকে রাখা উচিত নয়।
এতে বলা হয়, ‘শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য আমরা যখন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তখন সহিংসতার বিভিন্ন কারণের মধ্যে পার্থক্য করা এবং এমন একটি সমাধানের দিকে একসঙ্গে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বিভাজনের পরিবর্তে ঐক্যকে উৎসাহিত করে।’