বাবুল আখতার রানা
নওগাঁ, ৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘদিন বৃষ্টি নেই; প্রচন্ড খরায় পুড়ছে বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। চলতি মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও বর্তমানে প্রচন্ড খরার কারনে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। কিন্তু এপ্রিলের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন বাগান মালিকরা। এভাবে চলতে থাকলে ফলন বিপর্যয়ের আশংকা তাদের।
আর কৃষিবিভাগ বলছে; চলতি মাসেও বৃষ্টি না হলে আমের উৎপাদনের ক্ষেত্রে তেমন কোন ব্যঘাত ঘটবে না। তবে এমন আবহাওয়ায় আমের গাছের গোড়ায় সব সময় পানি এবং পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ তাদের।
আম উৎপাদনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে ছাড়িয়ে গেছে বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। প্রতি বছরই এ জেলায় বাড়ছে আম বাগান। এখানকার উৎপাদিত সুস্বাদু আম রুপালির সুনাম রয়েছে দেশ ও বিদেশে। প্রতি মৌসুমে নওগাঁয় উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের আম যাচ্ছে ভারত, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। আর মাত্র কয়েকদিন পরই বাড়ন্ত আমগুলো বাগান থেকে নামিয়ে বাজারজাত করার স্বপ্ন দেখছিলেন বরেন্দ্র অঞ্চলের বাগানিরা। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা তাপদাহ দুঃচিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তীব্র খরায় আমের বোটা লাল হয়ে পানি ও অভাবে মাটিতে ঝরে পড়ছে। এমন দৃশ্য নওগাঁর পুরো জেলায়।
বরেন্দ্র জেলা হিসেবে পরিচিত জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলা। জেলায় যে পরিমান আম বাগান রয়েছে তার ৭০ শতাংশ রয়েছে এসব উপজেলায়। বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। জেলায় আম রুপালি, কাটিমন, গোপালভোগ, নাক ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আর্শ্বিনা, বারী-৪ ও গুটি জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় জেলার ৬০ শতাংশ বাগানেই রয়েছে আমরুপালি ও ২০ শতাংশ বাগানে রয়েছে বারী-৪।
পত্নীতলার আম চাষী রুহুল আমিন, আব্দুস সালাম জানায়, প্রচন্ড খরার কারনে যে পরিমান আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে তাতে এবার আম চাষে লোকশান গুনতে হবে। খরা প্রবণ বরেন্দ্র এলাকায় পানি সংকটের কারনে বাগানে সেচ দিতে পারছেন না তারা। অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টি না হয় তাহলে আমের ফলন বিপর্যয়ের আশংঙ্কা তাদের।
সাপাহারের আম চাষী কোরবান আলী প্রামানিক, সুবল চন্দ্র জানায়, পানি সংকটের কারনে গাছে খুব কষ্ট করে পানি স্প্রে করা হচ্ছে। তবে তাতেও বেশি লাভ হচ্ছে না। গত বছর থেকেত এবার খরার প্রবণতা অনেকটা বেশি। তাই আর এভাবে ক’টা দিন চলতে থাকলে বাগানে গাছ থাকবে কিন্তু আম থাকবে না।
ধামইরহাটের আম বাগান মালিক আবু সাইদ রাজু ও স্বপন কুমার বলেন, টানা গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে বরেন্দ্র অঞ্চলের আম বাগানগুলোতে পানি অভাবে ব্যাপকহারে ঝরে পড়ছে আম। আমের জন্য এ মুহূর্তে দরকার বৃষ্টি।
পোরশার আম চাষী রোস্তম আলী, ফারুক ও দিলবর জানায়, টানা লম্বা সময় বৃষ্টি নেই। সূর্যের তাপে মনে হচ্ছে গাছের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। টানা তাপদাহের কারনে গাছ থেকে ঝড়ে পড়ছে আম। সেই সাথে পোকার আক্রমণ। টানা তাপদাহ দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের।
সাপাহার উপজেলার তিলনা গ্রামের আম চাষী ওবাইদুল হক বলেন, ২০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। গাছে কাঙ্খিত মুকুল আসলে পর্যাপ্ত গুটি আসেনি। তারপরও পরিচর্যা করছি। মনে হচ্ছে এ বছর আমের পরিমান কম হবে। আম কম হলে দাম বেশি হবে।
পোরশার আম চাষী মোঘল বলেন, ২৬ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। যার অধিকাংশ আম রুপালি। আর বাকিটা বারি-৪। আবহাওয়া ভালো যাচ্ছে না। রাতে কুয়াশা ও হালকা শীত হচ্ছে আবার দিনে গরম। এ কারনে গুটি ঝরে পড়ছে। এতে করে আমের পরিমান কম হবে মনে হচ্ছে। আমরা বাগানে পানি সেচ ও গুটি ঝরে পড়া রোধে গাছে হালকা করে কীটনাশক স্প্রে করে পরিচর্যা করছি।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, খরার কারনে কিছুটা আম ঝরে পড়লেও তেমন সমস্যা নাই। কারন ঝরে পড়ার পর যেসব আম থাকবে সেগুলোর মান ভালো থাকবে। গত বছর থেকে এবার আবহাওয়া অনেকটা ভালো। কারন এবার প্রতিটি আম গাছে খরার আগেই আমগুলো মটর দানায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এমন আবহাওয়ায় আমের গাছের গোড়ায় সব সময় পানি দিতে হবে। তা না দিতে পারলে পানি স্প্রে করতে হবে এবং পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। তাই গত বছরের চেয়ে এবার ফলন বেশি হবার আশা কৃষি বিভাগের। চলতি বছর নওগাঁর ১১টি উপজেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ টনের অধিক আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।