চট্টগ্রাম, ১১ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে একটি হাতিকে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় দুই জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ থেকে ১৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
দুই আসামি হলো- বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব চেচুরিয়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে সরোয়ার হোসেন (৪৮) ও একই এলাকার বাসিন্দা জাফর (৫২)।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাঁশখালী উপজেলার চেচুরিয়া বিট কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। হাতিটিকে হত্যা করে আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৯ এপ্রিল) গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, বাঁশখালী থানাধীন ৭নং সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাং এলাকার ধর্মধমার মোড় পাহাড়ি এলাকার মো. সরোয়ারের লিচু বাগানের ভেতরে ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের সময় একটি বন্য হাতিকে আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। হাতিটির মাথায়, পিটে, দুই কানের পাশে এবং পায়ুপথসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বন বিভাগের সহযোগিতায় মৃত হাতিটির পোস্টমোর্টেম সম্পাদন করেন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, হাতিটি পুরুষ, বয়স আনুমানিক ৬-৭ বছর, দাঁত ১.৫ ফুট, ওজন আনুমানিক ৮০০ কেজি।
এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা মৃত হাতিটির দুটি দাঁত ও পায়ের নখগুলো নিয়ে যায়। বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে বন বিভাগের লোকজন যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিহত বন্য হাতিটিকে মাটি চাপা দেন।
আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ওই বন্য হাতিটিকে গুরুতর আঘাত করে হত্যা করে তার দুটো দাঁত এবং পায়ের নখ অপসারণ করেছে। তারা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ৩৬(১) (২) ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছে। আসামিরা হাতিটিকে হত্যা করে আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন করেছে।
বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার জলদী রেঞ্জের পাইরাং বিটের আওতাধীন মনুমার ঝিরি এলাকায় গভীর বনের ভেতর হাতিটির মরদেহ পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ধারণা করছি, ফাঁদ পেতে হাতিটিকে দুষ্কৃতকারীরা হত্যা করেছে। হাতিটির পিঠে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরির আঘাত রয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর হাতিটির দাঁত ও নখ কেটে নিয়ে গেছে।’
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাতি হত্যার পর দাঁত ও নখ কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিট কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।’