ঢাকা, ১১ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ময়মনসিংহে সোয়াই নদীর ৪৬ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
জেলার গৌরীপুর উপজেলার ময়লাকান্দা মৌজায় সোয়াই নদীর অসমাপ্ত অংশ পুনঃখননের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ম প্যাকেজের ২৩ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজের মধ্যে ইতোমধ্যে সাড়ে ২২ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে ৫'শ মিটার কাজের ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে পুনঃখনন কাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় একজন ৫'শ মিটার কাজে আদালতের আদেশ দেখিয়ে কাজ বাধাগ্রস্ত করে রেখেছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী এক যুগান্তকারী রায়ে দেশের সকল নদীকে জীবন্ত স্বত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ওই রায়ে বলা হয়, নদীর জমি ব্যক্তি নামে রেকর্ডভুক্ত হলেও তা বাতিল হিসেবে গণ্য হবে এবং ওই জমি নদী শ্রেণীভুক্ত হবে। এ রায় অনুযায়ী অন্য কোন আদেশ এখানে বাঁধা হওয়ার সূযোগ নেই। পুনঃখনন সম্পন্ন হলে সোয়াই নদী জীবন্ত স্বত্তা হিসেবে তার স্বরূপে ফিরবে যা এই অঞ্চলের পরিবেশ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক সময় সোয়াই নদীতে বড় বড় নৌকা চলতো, শ্যামগঞ্জসহ আশেপাশের গ্রামের লোকজনের চলাচলের প্রধান মাধ্যম ছিল সোয়াই নদী। ধান, পাট ও অন্যান্য ফসল বোঝাই নৌকা এ নদীতে চলাচল করতো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোয়াই নদী নেত্রকোনা এবং ময়মনসিংহ জেলার হারিয়ে যেতে বসা একটি নদী। দীর্ঘদিন ধরে দখল ও দূষণে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় উপনীত হয়ে পড়ে। স্থানীয় গণমানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সোয়াই নদীর পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সোয়াই নদীর ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় নদীটি ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের চরনিলক্ষীয়া ভাটিপাড়া থেকে উৎপন্ন হয়ে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বাওইডহর নামক স্থানে মগড়া নদীতে পড়েছে। নদীটি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার খলিশাউড়া, গোহালাকান্দা, নারান্দিয়া ইউনিয়ন ও ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়ন, তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ও বিশকা ইউনিয়নের সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম। দীর্ঘদিন যাবৎ নদীটি পুনঃখনন না করার ফলে নদীটির অধিকাংশ ভরাট হয়ে প্রায় সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে পড়ে। ফলে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেচের মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা না পাওয়ায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতো। তাছাড়া বর্ষাকালে নদীটি দ্বারা যথাযথভাবে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সন্নিহিত এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করার কারণে পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাওয়াসহ নদী অববাহিকায় ফসলের নিবিড়তা ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। বিদ্যমান এই বাস্তবতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সোয়াই নদী পুনঃখনন কার্যক্রম গ্রহন করে। বহু প্রত্যাশিত সোয়াই নদীর পুনঃখনন কাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু হলে গণমানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দেয়। ২ টি প্যাকেজের মাধ্যমে ২৩ কিলোমিটার করে সোয়াই নদীর মোট ৪৬ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম প্যাকেজে ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ২২ কিলোমিটার কাজ শেষ। ৫০০ মিটার কাজ বাধাপ্রাপ্ত। গুগল ম্যাপ এবং গুগল ম্যাপের হিস্টোরিক্যাল ইমেজ পর্যালাচনা করেও ওই ৫০০ মিটার অংশের নদীর পানির প্রবাহের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অসম্পূর্ণ কাজের উজানে এবং ভাটিতে নদী পুনঃখনন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং ৫০০ মিটার কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় নদী পুনঃখননের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া পানির প্রবাহ না থাকলে এ অংশে পলি জমে পুনরায় নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে যথাযথভাবে পানি নিষ্কাশন না হলে উজানের প্রায় ১৫-২০ টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কৃষি উৎপাদন এবং মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে জমি সংক্রান্ত জটিলতা সমাধানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, আইএমইডি, পরিকল্পনা কমিশন এবং পানি উন্নয়নের বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোয়াই নদীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে নদীর জায়গা চিহ্নিত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে পত্র পাঠানো হয়েছে।