বর্ষা আসলেই বাঁধ ভাঙে, শঙ্কায় তিস্তা পারের মানুষ, দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি রংপুরবাসীর

বাসস
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫১
ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রংপুর তিস্তা পারের বেড়িবাঁধ । ছবি: বাসস

/রেজাউল করিম মানিক/

রংপুর, ২০ এপ্রিল ২০২৫( বাসস): ‘সামনোত তো বষ্যা আসি গেইল। সবায় খালি কতায় কয়, এলাও বান্দের কোনো কাম (বাঁধের কাজ) হইল না। কায় জানে বাহে, এইবার বান্দ ভাঙলে হামারও বুজি এটেকোনা থাকা হবার নয়’- আসন্ন বর্ষায় পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় এমন অভিব্যক্তি রংপুরের গঙ্গাচড়ার ধামুর এলাকায় তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধের বাসিন্দা শহর বানুর। 

আসছে বর্ষা, দুশ্চিন্তা বাড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। প্রতিবছরই ভয়াবহ বন্যায় গৃহহীন হন তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ । তাই এবার বন্যা আসার আগেই  বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা । 

কয়েক বছর ধরে তিস্তার পানি কখনও কমে, আবার কখনও বেড়ে যায়। পানিপ্রবাহের এ অস্বাভাবিকতায় প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার ওপর আছে দখল-দূষণ। এসব কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তিস্তা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আগামী বর্ষা ঘিরে নাজুক এ বাঁধ নিয়ে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তিস্তাপারের মানুষ। তারা দ্রুত বাঁধটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে নীলফামারীর জলঢাকা থেকে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা রেল সেতু পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

তিস্তা রেল সেতু থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত আরও ২১ কিলোমিটার রয়েছে এই বাঁধের অংশ। ২০১৯ সালে সর্বশেষ ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হয়। তিস্তা ব্যারাজ থেকে লালমনিরহাট হয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর পর্যন্ত মোট ১২০ কিলোমিটার বামতীর বাঁধ। 

সূত্র জানায়, ডানতীর বাঁধের নীলফামারীর জলঢাকার শৌলমারী এলাকায় দুই কিলোমিটার, আলসিয়াপাড়ায় এক কিলোমিটার ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। 

সরেজমিন দেখা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া থেকে নোহালী পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধের ওপর বসতি গেড়েছে নদী ভাঙনের শিকার ১০ হাজার পরিবার। বসতির ভারে তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। বাঁধের বেশির ভাগ স্থান কেটে সমতল করে স্থানীয় দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় জলঢাকার শৌলমারী ও গঙ্গাচড়ার নোহালী সীমান্ত থেকে রংপুরের কাউনিয়ার নিচপাড়া পর্যন্ত দখলদারদের কবলে চলে যায়। হুমকির মুখে পড়ে ডানতীর বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বহুবার উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েও দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারেনি। বাঁধটি ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁধের প্রস্থ ১৪ ফুট থাকার কথা থাকলেও এখন অনেক জায়গাতেই তা নেই। 

কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার বাসিন্দা নওশের আলী বলেন, গত দুই বছরের বন্যায় বিভিন্ন উপবাঁধসহ বিনবিনা এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধের বিশাল এলাকা বিলীন হয়ে গেলেও তা সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো পদক্ষেপ নেই। এসব কারণে তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

গঙ্গাচড়া সদরের গান্নারপার এলাকার বাসিন্দা গোলাম মওলা বলেন, পানি বাড়া-কমার কারণে বাঁধে পানির ধাক্কা লেগে বিভিন্ন স্থানে মাটি সরে গেছে। বর্ষা শুরুর আগে বাঁধ মেরামত করা না গেলে বিশাল এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একই এলাকার বাসিন্দা মনছুর আলী বলেন, প্রতিবছরই এখানকার ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায় তিস্তা। গোটা মৌসুম জুড়ে উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। ঠিকানাহীন পরিবারগুলো প্রতিবছর বাঁধ কেটে বস্তি গড়ে তুলছে। এতে বাঁধ নাজুক হয়ে পড়েছে।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘খুব দ্রুত তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কার করা প্রয়োজন। বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করলে গোটা রংপুর শহর তলিয়ে যাবে।’

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সালের পর বাঁধের সংস্কার কাজ করা হয়নি। ওই সময় বাঁধে বসবাসকারীদের উচ্ছেদও করা হয়েছিল। মাঝখানে আবারও বাঁধে বসতি গড়ে উঠেছে। এতে বাঁধের বেশকিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।’ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সূর্যবংশীর রেকর্ড গড়া ম্যাচে হারল রাজস্থান
বিগত তিন নির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এনসিপি’র
ভোলায় তোফায়েলের ছেলে বিপ্লব ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএমইউতে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত
জলবায়ু সংকট উপকারী প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তি ত্বরান্বিত করছে
গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন যেকোনো দিন : চিফ প্রসিকিউটর
চট্টগ্রামে জাহাজ থেকে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে নাবিক নিখোঁজ
ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ২০ জুলাই
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ৫ দিনব্যাপী ভর্তি মেলা শুরু
ঝালকাঠিতে ১০ শহীদের পরিবারকে অর্থ সহায়তা প্রদান
১০