\ এম এ মুন্নাফ খান \
মানিকগঞ্জ, ২১ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : মিষ্টি আলু চাষের হারানো গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছে মানিকগঞ্জ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ১২২ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। এর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১১৬ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪’শ ৭ মেট্রিক টন।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্ষেত থেকে মিষ্টি আলু তোলা শেষ হতে চলেছে। বাজারে মিষ্টি আলুর উচ্চমূল্য পেয়ে কৃষকরা খুশি।
ডিএই সূত্র আরো জানায়, একসময় মানিকগঞ্জ জেলা মিষ্টি আলু চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। সেসময় জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করা হত। কিন্তু উৎপাদকরা তাদের পণ্যের কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এভাবে আস্তে আস্তে জেলায় মিষ্টি আলুর চাষ কমে আসে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কুশেরচর গ্রামের একজন বয়স্ক মিষ্টি আলু চাষি আব্দুল জলিল (৭০) বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও প্রতি মণ মিষ্টি আলু ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করতে হত। বাজারে বিক্রি করে উৎপাদন খরচও আমরা পেতাম না। এখন মিষ্টি আলু অন্যতম সেরা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি আলু ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে বাজারে আগাম চাষের কাটা মিষ্টি আলুও প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।’
হরিরামপুর উপজেলার চর হরহারদিয়ার আরেক মিষ্টি আলু চাষি আব্দুল হক (৭৫) বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আগে আমরা উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে আমাদের বালুকাময় জমিতে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি আলু চাষ করতাম। স্বাধীনতার পরও বিস্তীর্ণ এলাকার দারিদ্র্য পীড়িত মানুষ খাদ্য সংকটের জন্য কষ্ট ভোগ করত। তখন মিষ্টি আলুই ছিল তাদের প্রধান খাদ্য।’
অতীতের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার পরিবার প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করত এবং নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত আলু বাজারে বিক্রি করত। কিন্তু ন্যায্য মূল্য পেত না। প্রতি মণ আলু মাত্র ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হতো। তখন আধুনিক চাষ পদ্ধতি শুরু হয়নি। গৃহস্থরা তখন জীবিকা নির্বাহের জন্য ওইসব জমিতে আউশ ও আমন চাষ করত।
বৃদ্ধ কৃষক আব্দুল হক বলেন, প্রবল পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে হরিরামপুর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের ৫টি ইউনিয়নই গ্রাস করে ফেলেছিলো। ফলে এই পাঁচ ইউনিয়নের বাসিন্দারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। এতে সব ধরনের ফসলের চাষাবাদও বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘দুই দশক পর আমরা আবার পরীক্ষামূলকভাবে মিষ্টি আলু চাষ শুরু করেছি’।
জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামের মিষ্টি আলু চাষি ৭২ বছর বয়সী আব্দুল ওহাব মোল্লা বলেন, ‘বাজারে এর চাহিদা লক্ষ্য করার পর আমরা দীর্ঘদিন পর আলু চাষ শুরু করেছি। এখন এটি একটি জনপ্রিয় খাদ্য পণ্য এবং সবজিও বটে।’
ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামের আরেক মিষ্টি আলু চাষি আলী আসগর বলেন, ‘মিষ্টি আলু চাষ করা সহজ এবং এর জন্য কোনও সার ও সেচের প্রয়োজন হয় না।’
বেউথা বাজারের মিষ্টি আলু ক্রেতা ৩৫ বছর বয়সী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমরা মিষ্টি আলু সবজি হিসেবে ব্যবহার করি এবং মিষ্টি আলু অন্যান্য সবজির সাথে মিশিয়ে দিলে সবজি এবং সবজি খিচুড়ি আরও সুস্বাদু হয়ে ওঠে।’
ডিএই অফিস সূত্র জানায়, বেলে এবং আধা-বালি জমি মিষ্টি আলু চাষের জন্য উপযুক্ত। জেলার কিছু মানুষের কাছে মিষ্টি আলু একটি ভালো খাদ্যদ্রব্য। মিষ্টি আলু অনেকের কাছে ভালো খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়।