ঢাকা, ২১ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, তা আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এর পরিবর্তে সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হলেও এ সংক্রান্ত রিভিউ দরখাস্তটি অনিষ্পন্ন থেকে যায়। গত ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগে ওই রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হলে বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্য বিশিষ্ট সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু হয়। কাউন্সিলের অপর দুই সদস্য হলেন- আপিল বিভাগের বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতি বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে স্বীয় পদ হতে পদত্যাগ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। গত ১৯ নভেম্বর তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতির বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি তাদের বেঞ্চ প্রদান হতে বিরত থাকেন। তাদের মধ্যে বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন গত ৩০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন। এছাড়া, দুই বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও এস এম মাসুদ হোসেন দোলন হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন। গত বছরের ৩০ জুলাই তাদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে আরও ছয় মাসের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। গত ৩০ জানুয়ারি তাদের সেই বর্ধিত মেয়াদও শেষ হয়।
এদিকে দুই বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খান এবং আশীষ রঞ্জন দাস ইতোমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খান গত ৩০ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস গত ৩০ জানুয়ারি তাদের চাকরিকালীন মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যান।
এছাড়া, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি দুইজন বিচারপতিকে অপসারণ করেন। এর মধ্যে বিচারপতি খিজির হায়াতকে গত ১৮ মার্চ এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে গত ২১ মে অপসারণ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আরও পাঁচ বিচারপতির বিষয়ে বর্তমানে কাউন্সিলের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই পাঁচ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তাকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে তলব করা হয়। গত ১ জুলাই তিনি কাউন্সিলের সামনে হাজির হয়ে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করেন।