কক্সবাজার শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু

বাসস
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৬
কক্সবাজার জেলা শহরের জলাবব্ধতা নিরসনে বর্ষার আগেই নালার ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের কাজ শুরু করেছে কক্সবাজার পৌরসভা। ছবি : বাসস

।। ইব্রাহিম খলিল মামুন।।

কক্সবাজার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : জেলা শহরের জলাবব্ধতা নিরসনে বর্ষার আগেই নালার ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের কাজ শুরু করেছে কক্সবাজার পৌরসভা।

একদিকে বঙ্গোপসাগর, অন্যদিকে সদা প্রবহমান বাঁকখালী নদী; তারই মাঝে অবস্থান পর্যটন শহর কক্সবাজারের। অথচ একটু ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় এ পর্যটন শহরের অর্ধেক এলাকা। বন্যার পানি ঢুকে যায় বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে তৈরি হয় চরম জনভোগান্তি। এসব জনভোগান্তির  নিরসনে কাজ চলমান রয়েছে।

তবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, শুধু নালা পরিস্কার করলেই জনভোগান্তি কমবেনা, এরসাথে জড়িত পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বাঁকখালী নদীর প্রবাহ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে পারলেই আশাকরি জনভোগান্তি কমে আসবে।

কক্সবাজার পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার পেছনে চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে কক্সবাজার পৌরসভা। এগুলো হচ্ছে নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড় কাটা, বাসাুবাড়ির ময়লাুআবর্জনা নালায় ফেলার কারনে নালা ভরাট হয়ে যাওয়া এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন।

স্থানীয় লোকজন জানান, একটু ভারী বর্ষণ হলেই কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাটা, সমিতি পাড়া, কলাতলী হোটেল মোটেল জোন, টেকপাড়া, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি ঢুকে যায় বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তৈরি হয় চরম জনভোগান্তি। বিশেষ করে শহরের সাগর তীরবর্তী কলাতলী পর্যটন এলাকায় এ ভোগান্তি চরম আকার নেয়। এখানেই অন্তত চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস রয়েছে। অধিকাংশ পর্যটক বেড়াতে এসে এখানেই অবস্থান করে।

কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, গত এক দশকে কক্সবাজার পৌরসভার উন্নয়নে কয়েক'শ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ জলাবদ্ধতার মতো মূল সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি । পাশাপাশি পাহাড় কাটার মাটি এসে ট্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি  বন্ধের পাশাপাশি পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।

নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সমৃদ্ধ কক্সবাজার এর ভাইস চেয়ারম্যান আদনান সাউদ বলেন, বিগত সরকার কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার শহরের সবচেয়ে বড় নালাটি বন্ধ করে দেয়। কক্সবাজার পুরনো ঝিনুক মার্কেটের সামনের বড় নালাটি দিয়ে পুরো শহরের সিংহভাগ পানি সাগরে যেত, সেই নালাটি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর কুফল এসে পড়েছে পর্যটন জোনে। অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, জলাবদ্ধতার কারনে অনেক রেস্টুরেন্টে পানি ঢুকে যায়। হোটেল মোটেল জোনের ড্রেনগুলো মাটি এসে ভরাট হয়ে যায়। এখানে আড়াইশর বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সড়ক জনপদের ছয়টি কালভার্ট নিচু হয়ে গেছে। সড়কের পশ্চিম পাশের ড্রেনের ওপর বড় স্ল্যাব দেওয়ার কারনে পৌরসভার ময়লা পরিষ্কারের গাড়িগুলো সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। পানি বাধাগ্রস্ত হয়, এভাবেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মূলত পাহাড় কাটার মাটি এসে আমাদের আশপাশের সব ড্রেন ভরাট হয়ে যায়। এ ছাড়া সড়ক বিভাগ সড়কের সংস্কার করতে গিয়ে পুরনো ৬টি কালভার্ট উঁচু না করেই এর ওপর রাস্তা নির্মাণ করেছে। ফলে এসব কালভার্ট দিয়ে পর্যাপ্ত পানি সরতে পারছে না। হোটেল শৈবালের সামনে দিয়ে যে বড় নালাটি আছে তার দুটি জায়গায় গাড়ি পারাপারের রাস্তা করায় পানিগুলো যেতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ সমস্যার কারনে পর্যটন জোনে জলাবদ্ধতা হয়। ফলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে ব্যবসায়ীদের মুক্তি দিতে হবে। এক্ষেত্রে অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধ করার পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।  তাহলেই জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটন জোনের জলাবদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কক্সবাজার পৌরসভা, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, পর্যটন ব্যবসায়ী, হোটেল মালিকসহ সবাইকে নিয়ে আমি জরুরি সভা করেছি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে তার কাজগুলো  সবাই মিলে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। পাশাপাশি বর্ষা শুরুর আগে গত একমাস ধরে কক্সবাজার পৌরসভার নালাগুলো জরুরি ভিত্তিতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী বর্ষার আগেই সব সমস্যা সমাধান করার জন্য। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
কিশোরগঞ্জের হাওরে চলছে ধান কাটার উৎসব
একশ নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দাবি এনসিপি’র
আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে স্বাগত জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টাকে 
বিরামপুরে কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ
রাঙ্গামাটিতে রোপা বোরো ধান কাটার উদ্বোধন
উবারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর সাবস্ক্রিপশন কৌশলের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা 
কাতারে স্বাগত সংবর্ধনায় বাংলাদেশী চার নারী ক্রীড়াবিদের যোগদান
কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ হচ্ছে,দরকার সরকারি সহযোগিতা
তৃতীয় দিনের খেলা শুরু দুপুর ১টায়
নাটোরে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত
১০