যশোরে কীটনাশক ছাড়াই ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে ধান উৎপাদনে সাফল্য

বাসস
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৫৮
কীটনাশক ছাড়াই ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে ধান উৎপাদন। ছবি : বাসস

যশোর, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় কীটনাশক ছাড়াই ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে ধান উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছে।

ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে ধানের পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ।

এই পদ্ধতিতে ধান উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার যেমন করতে হচ্ছে না, খরচ কমছে, উৎপাদন বাড়ছে, পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে, উৎপাদিত খাদ্যও থাকছে সম্পূর্ণ নিরাপদ। 

এই প্রযুক্তিটি মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোরের তিনটি উপজেলা ও নড়াইলে ১০ বিঘা জমিতে ডায়াবেটিস ধান হিসেবে পরিচিত ব্রি-১০৫ এর চাষ করা হয়। 

এরমধ্যে ৫ বিঘা জমিতে ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে এবং এই জমির পাশে থাকা আরও ৫ বিঘা জমিতে কৃষক প্রচলিত পদ্ধতিতে তার ইচ্ছামতো এই ধান চাষ করে। 

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের টেকনিক্যাল সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে এই পরীক্ষাটি বাস্তবায়ন করে বেসরকারি সংস্থা সলিডারিড্যাড ও জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন। সলিডারিড্যাড-এর প্রোগ্রাম অফিসার রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে চাষ করা ৫ বিঘা জমির ধানে কোন ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। এই জমিগুলোর আইলে কসমস, গাঁদা ও সূর্যমুখী ফুল গাছ রোপন করা হয়। এই গাছগুলোতে বন্ধুপোকার উপস্থিতি বেশি হয়। ধানে ক্ষতিকর পোকার আক্রমন ঠেকায় তারা। 

অন্যদিকে বাকি ৫ বিঘা জমিতে চাষীরা সাধারণত যেভাবে ধান চাষ করেন সেভাবেই কীটনাশকসহ চাষ করেছেন।
রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই পরীক্ষার ফলাফল বোঝার জন্য গতকাল মঙ্গলবার মাঠ দিবসের আয়োজন করে এসব জমি থেকে নমুনা ফসল কাটা হয়। দেখা গেছে, ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে চাষ করা ৫ বিঘা জমিতে বিঘা প্রতি ২৬ মন ধান হয়েছে। অন্যদিকে কৃষকের ইচ্ছামতো চাষ করা ৫ বিঘা জমিতে বিঘা প্রতি ধান হয়েছে ২৫ মন’। 
তিনি বলেন, ‘ধান উৎপাদনের পরিমাণের ক্ষেত্রে বড় ধরণের কোন হেরফের না হলেও কীটনাশক ব্যবহার না করায় বিঘা প্রতি ধান উৎপাদনে খরচ কম হয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। এই চাষপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, উৎপাদিত খাদ্য সম্পূর্ণ নিরাপদ’। তাছাড়া ধানের আইলে লাগানো কসমস, গাঁদা ও সূর্যমুখী ফুল গাছে আশ্রয় নেওয়া বন্ধু পোকা সংশ্লিষ্ট জমিগুলোর পরবর্তী ফসলের জন্যও ভাল কাজ করবে বলে জানান তিনি।

জেলার মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের গাঙ্গুলিয়া গ্রামের কৃষক জুলফিকার আলী সাড়ে ১৬ শতক জমিতে ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে ব্রি ১০৫ ধানের চাষ করেন। পাশেই আরও সাড়ে ১৬ শতক জমিতে একই ধানের চাষ করেন গতানুগতিক পদ্ধতিতে, কীটনাশক ব্যবহার করে। ফলাফল দেখে তিনি খুবই উল্লসিত। বলেন, ‘অযথাই কীটনাশক ব্যবহার করে খরচ বাড়িয়েছি। কীটনাশক ছাড়াই পাশের জমিতে বেশি ধান পেয়েছি’। কৃষিতে ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি চাষীদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে লাভ বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি। 

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, অযাচিত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করে ধান উৎপাদনে খরচ যেমন বাড়ছে, খাদ্যও অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ইকো ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে ধান চাষ করার জন্য তিনি চাষীদের পরামর্শ দেন। 

ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট খুলনার সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন জিতু বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের পরিবর্তে কম খরচে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে চাষীদের উৎসাহিত করতে হবে। একইসাথে উফসী ধানের জাতগুলোর বীজ তৈরির জন্য স্থানীয় বীজ উদ্যোক্তা তৈরির ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি। বলেন, পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কম খরচে উফসী জাতের ধান চাষ করলে কৃষক যেমন লাভবান হবে, ভোক্তারাও নিরাপদ খাদ্য পাবে। 


 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঝিনাইদহে ৩৮ বছরের শিক্ষকতা শেষে শ্রদ্ধা-ভালবাসায় প্রধান শিক্ষকের বিদায়
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম হাসপাতালে
ডাকসু প্রার্থী তালিকা প্রকাশ: বৈধ প্রার্থী ৪৬২ জন
যৌথ বাহিনী এক সপ্তাহের অভিযানে সারাদেশে আটক ৫৬
রাজধানীতে ডিএমপির বিশেষ অভিযানে ৬৫ জন গ্রেফতার
চট্টগ্রামে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল: ফাওজুল কবির খান
এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চার নির্দেশনা    
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর-সংস্থার গতিশীলতা দরকার : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব
সিলেটে অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান, ৩ জনের কারাদণ্ড
১০