টাঙ্গাইল, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : গত তিন দিনে জেলায় তাপমাত্রার উর্ধ্বমুখী প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আজ বিকেল তিনটায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। হাসপাতালগুলোতে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ বুধবার বিকেল ৩টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সোমবার ছিল ৩২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তিন দিনে গড়ে প্রায় ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটিকে অস্বাভাবিক বলছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এটা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহেরই প্রভাব। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে এখন একটি গ্রীষ্মকালীন উচ্চচাপ বলয় কাজ করছে। ফলে দিনের বেলায় সূর্যের তীব্রতা বাড়ছে এবং তাপমাত্রাও ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, বঙ্গোপসাগরের উপর কোন নিম্নচাপ না থাকায় এবং বর্ষাকালীন বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় না হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে গরম ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
আগামী কয়েকদিন টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। তবে ২৫ এপ্রিলের পর কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে- যা গরমের তীব্রতাকে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারে।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল শহর এবং আশপাশের উপজেলাগুলোতে বুধবার গরমে জনজীবনে স্থবিরতা লক্ষ করা গেছে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল অনেকটাই কম ছিল। যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন তাদের অধিকাংশই মাথায় কাপড় বা ছাতা ব্যবহার করছেন। প্রচণ্ড গরমে রিকশাচালক, দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষজন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অটোরিকশা চালক রফিক মিয়া জানান, গত দুইদিন ধরে এমন গরম পড়ছে যে দুপুরের পর কাজ করা যাচ্ছে না। শরীর ঝিম ঝিম করে- ঘামে কাপড় ভিজে যায়। কিন্তু না খাটলে তো পরিবারের মুখে আহার তুলে দেওয়া হবেনা। তাই কষ্ট হলেও তিনি পরিশ্রম করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খায়রুল হাসান জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে হাসপাতালগুলোতে তাপজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগী রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, গরম থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সরাসরি রোদে না যাওয়া, হালকা ও সুতির কাপড় পরিধান করা এবং শিশু ও বয়ষ্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সঞ্জয় কুমার মোহন্ত জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুলের শিশুদের গরম থেকে রক্ষা করতে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্রগুলোতে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্র সচিবদেরকে এ বিষয়ে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।