পরিবেশবান্ধব লিচুর ফলছেদক পোকা দমনে সফল হাবিপ্রবি

বাসস
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৯
পরিবেশবান্ধব লিচুর ফলছেদক পোকা দমনে সফল হাবিপ্রবি। ছবি: বাসস

দিনাজপুর, ২৪ এপ্রিল ২০২৫(বাসস): হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) পরিবেশবান্ধব লিচুর ফলছেদক পোকা দমনে ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছে। আম এবং পেয়ারার মতো এবার ব্যাগিং পদ্ধতিতে লিচু উৎপাদনেও ভালো ফলাফল পাচ্ছে ।

দিনাজপুর হাবিপ্রবি'র জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. খাদেমুল ইসলাম জানান, হাবিপ্রবি'র কৃষি অনুষদের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম তার গবেষণায় লিচুর জন্য ক্ষতিকর ফলছেদক পোকা আক্রমণ রোধে ব্যাগিং পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলভাবে পোকা দমন করা সম্ভব হয়েছে।

জানা যায়, এই পদ্ধতিতে লিচু গাছের সবুজ পাতার মাঝে মাঝে কমলা, হলুদ, নীল, সাদাসহ রংবেরঙের ব্যাগ দিয়ে ফল ঢেকে ঝুলানো হয়। মূলত লিচু ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ রোধ করতে রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যাগের ব্যবহার করছেন গবেষকরা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লিচুর ফলছেদক পোকা লিচি ফ্রুট বোরার আক্রমণে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশেরও বেশি লিচু নষ্ট হয়ে যায়। অধ্যাপক ড. আবদুল আলীম গত কয়েক বছর ধরেই বিষমুক্ত লিচু উৎপাদনের জন্য লিচুর পোকা রোধে গবেষণা করছেন। তিনি ব্যাগিং, বায়োপেস্টি সাইড ও ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর ব্যবহার করে গত বছর লিচুর পোকা রোধে সফল হয়েছেন।

অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহারে লিচু গাছে মুকুল থেকে গুটি বের হওয়ার পর পরই একটি ব্যাগ দিয়ে ৩০ থেকে ৪৫টি করে লিচু ঢেকে দেওয়া হয়। ফলে ক্ষতিকর এ পোকা লিচুতে আক্রমণ করার সুযোগ পায় না। ব্যাগের মধ্য দিয়ে আলো এবং বাতাস চলাচলের সুযোগ থাকায় লিচু বৃদ্ধিতে ব্যাগের কোনো প্রভাব নেই বললেই চলে। পাশাপাশি লিচু ঢেকে রাখায় বাদুড় কিংবা অন্য কোনো পোকার আক্রমণ থেকে লিচু রক্ষা পায়। অন্যদিকে ক্ষতিকর রাসায়নিক বালাই নাশকের পরিবর্তে বায়োপেস্টি সাইড ও ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর ব্যবহার করায় লিচু সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত হয়। ফলে ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের বংশ বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হয়। 

ড. আবদুল আলীম আরো বলেন, লিচুর ফল ছিদ্রকারী পোকা লিচুর একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। এ পোকা থেকে বাঁচতে কৃষকরা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছেন। এসব কীটনাশক মানব দেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকির কারণ। এসব ক্ষতিকর পদার্থ থেকে বাঁচতে আমরা রাসায়নিক ব্যবহারের পরিবর্তে, পেনিকেল ব্যাগিং পদ্ধতি, বায়োপেস্টি সাইড এবং ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর ব্যবহার করে, লিচুর ক্ষতিকর ফল ছেদক পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষণা করছি।

গত বছর এই গবেষণায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা এ পদ্ধতি ব্যবহারে লিচুর ফল ছেদক পোকা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি।

অনেক সময় লিচু ঢেকে রাখার ফলে রং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের এ পদ্ধতি ব্যবহারে লিচুর রং আমরা খুব সুন্দর পেয়েছি। পাশাপাশি উৎপাদিত লিচুর ফলন পেয়েছি প্রত্যাশা অনুযায়ী। আমরা আশা করছি, এই প্রকল্প শেষে লিচুর ক্ষতি কারক ফলছেদক পোকা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ভালো প্রযুক্তি আমরা কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো।’

তিনি জানান, চলতি লিচুর মৌসুমে অনেক লিচু বাগানের মালিককে এই পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী করতে সফল হয়েছেন। 

তিনি বলেন, আগামীতে লিচুতে পোকামাকড় প্রতিরোধে ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহারে সফল হওয়ার আশা করা যাচ্ছে। এখন ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের প্রচারণার মাধ্যমে বাগান মালিকদের শতভাগ আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলে, বিষমুক্ত লিচু বাজারজাত করা সম্ভব হবে। ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে লিচু খেতে পারবেন। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
চাঁদপুরের মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর ১৫ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন
যশোরে বোরো’র অধিক ফলন, ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক
রাজধানীর আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোর ইজারা নিয়ে হাইকোর্টে রিট
বোয়ালখালীতে লোকালয়ে আসা ১২ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার 
শুল্ক যুদ্ধের প্রভাবে মুনাফা কমেছে নকিয়ার
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের ‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসেবে প্রস্তুত করার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার
সাবেক এমপি শেখ তন্ময় ও শেখ সালাহউদ্দিনসহ চারজনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রোক
বহিষ্কৃত সেনা অফিসার জিয়াউল আহসানের সম্পত্তি ক্রোক, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
রাঙ্গামাটিতে কৃষি কর্মকর্তাদের আঞ্চলিক কর্মশালা
১০