চট্টগ্রাম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৬তম আসরে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) নগরীর লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলায় প্রায় ২৩ মিনিটের লড়াই শেষে আয়োজক কমিটি শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করে। রানার্সআপ হন কুমিল্লার আরেক বলী রাশেদ। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এবারও ফাইনালে অংশ নেন বাঘা শরীফ ও রাশেদ বলী।
এর আগে, বিকেল ৪টায় নগরের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠের অস্থায়ী মঞ্চে শুরু হয় বলী খেলা। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ১২০ জন বলী অংশ নেন।
বিকেল চারটায় খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বৈশাখের তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে বলী খেলা দেখতে দুপুর থেকে নগরের লালদীঘি ময়দান ছিল উপচে পড়া দর্শকের ভিড়। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন হাজারো মানুষ। ঢোলের তালে তালে দর্শকদের উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল পুরো মাঠ।
জব্বারের বলী খেলা ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, আব্দুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল জানান, বলী খেলার ১১৬তম আসরে এবার রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১৪৭ জন বলী। এতে জাতীয় পর্যায়ের বলীরাও এবার অংশ নিয়েছেন।
তিনি জানান, আমার দাদা, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক মরহুম আব্দুল জব্বার সওদাগর এই বলী খেলার সূচনা করেন। যুবকদের শারীরিকভাবে প্রস্তুত করার পাশাপাশি জাতীয় চেতনা জাগাতে বলী খেলা ছিল একটি কৌশলী উদ্যোগ।
এদিকে বলী খেলাকে ঘিরে চলছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বৈশাখি মেলা। নগরীর সিনেমা প্যালেস থেকে লালদীঘি মোড় হয়ে শাহ আমানত মাজার গেট। অন্যদিকে টেরি বাজার এলাকা থেকে কোতোয়ালি মোড় পর্যন্ত বসেছে এ শত বছরের পুরোনো মেলার দোকানপাট। নারী-পুরুষ, শিশু সবাই ঘুরে ঘুরে পছন্দ মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন মেলা থেকে।
১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলী খেলার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এটি জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৯ সাল থেকে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রতি বছরের ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় এই জব্বারের বলী খেলা।
জানা গেছে, ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার সওদাগরকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামি-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।