অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ সড়কে জ্যাম লেগেই থাকে, ভোগান্তিতে শহরবাসী

বাসস
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ১৭:২৭
বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ সড়কে জ্যামে ভোগান্তিতে শহরবাসী। ছবি: বাসস

।। আজাদ রুহুল আমিন।।

বাগেরহাট, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস): শহরের ভেতরের রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ কমাতে বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ সড়ক নির্মিত হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে জনসাধারণের ভোগান্তির অন্ত নেই। নিয়ম বহির্ভূতভাবে দিনের বেলা সুপারি পট্টি ঘাট, বাজার ঘাট থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও  ট্রলারে পণ্য বহন ও বেপরোয়া লোড আনলোড হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে । 

শহরের পুরানো সড়কের ফলপট্টি সাধনার মোড়, শালতলার মোড়, কাজি নজরুল ইসলাম সড়ক, রেলরোডসহ প্রধান বাজারে দীর্ঘ জ্যাম নিরসনে ২০০২ সালে এম এ এইচ সেলিম, এমপি প্রথম উদ্যোগ নেন। তার প্রচেষ্টায় ২০০২ সালেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে একনেকের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ শহররক্ষা বাঁধ সড়ক নির্মাণ করে। 

পুরাতন শহরে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ কমাতে এবং জনসাধারণের ভোগান্তি দূর করতে ভৈরব নদের পার্শ্বজুড়ে এই শহররক্ষা বাঁধ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। অনেক বাঁধা পেরিয়ে এমপি সেলিম এ বাঁধ সড়ক নির্মাণে সফল হন। এরপর কিছুদিন এলাকাবাসী এর সুফল ভোগ করলেও কয়েকবছর পরই ভাটশালা, সুপারি পট্টি ঘাট থেকে ফলপট্টি মসজিদ পর্যন্ত আগের মতই জ্যাম লেগে থাকে।

পুলিশের পক্ষ থেকে ঐ সড়কে সাইনবোর্ডে সন্ধ্যার পর পণ্যবাহী ট্রাক লোড আনলোড করার নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও কেউ মানে না।  বাগেরহাট পৌরসভার সড়কে ভোর রাত থেকে ঢাকা, খুলনা ও চিটাগং থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে। অন্যদিকে নদী পথে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, স্বরুপকাঠি, মোরেলগঞ্জ, শরনখোলা থেকে আসা মালামাল দুপুর পর্যন্ত লোড আনলোড করা হয়। এ কারণে সড়কের মাছবাজার,কাঁচাবাজার, ফলপট্টি মসজিদ পর্যন্ত দীর্ঘ জ্যামে আটকে থাকে রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকের যাত্রী সাধারণ। এই অসহনীয় গরমে ক্রেতা, গ্রাহক ও  সাধারণ পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। 

বাগেরহাট জেলার কচুয়া, সাইনবোর্ড, মোরেলগঞ্জ, শরনখোলা, পিরোজপুর, নাজিরপুর ও বরিশাল থেকে  প্রত্যন্ত অঞ্চলের  রোগীরা সেবা নিতে আসেন বাগেরহাট আধুনিক ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসúাতালে। কিন্তু জ্যামের কারণে গর্ভবতী মা, বোন ও মুমূর্ষু রোগীদের এখানে এসে জ্যামে আটকে থাকতে হয়। পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।

শহরের বেষ্টনী হিসেবে দুই প্রান্তে অত্যন্ত ব্যয়বহুল দড়াটানা সেতু ও মুনিগঞ্জ সেতুর দূরত¦ মাত্র ১০ মিনিটের। কিন্তু জ্যামের কারণে সেতু অতিক্রম করতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। বাগেরহাট শহরের বেষ্টনী হিসেবে শুধু নয়, এই শহররক্ষা বাঁধ সড়কটি জেলার মধ্যে  যোগাযোগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ও পৌরসভার কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে তোলে ।

দীর্ঘদিনের অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতায় স্থানীয় বাসিন্দা ও শহর, শহরতলির নাগরিকরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামের ভুক্তভোগী মিজান বাসসকে বলেন, কোন নিয়ম শৃঙ্খলা না  থাকায় এলাকাবাসী এহেন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। 

বাগেরহাট শহরের নাগের বাজার এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বাসসকে বলেন, ‘ এই সড়কে কোন ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। এছাড়া বড় বড় দোকান মালিক মানুষের ভোগান্তির তোয়াক্কা না করে যখন খুশি সড়ক আটকিয়ে মালামাল বহন করছে। কেউ প্রতিবাদ করতে এলে শ্রমিকরা মারমুখী আচরণ করে। অভিযোগ জানানোর যেন কেউ নেই।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যত্রতত্র ইজিবাইকের গাড়ির বহর থাকায় এবং পার্কিং ব্যবস্থা ও স্ট্যান্ড না থাকায় দিনে দিনে এই সংকট ঘনীভুত হচ্ছে। 

বাসাবাটি এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজসেবী বগা ক্লিনিকের মালিক শেখ ফায়জুল হক মন্টু বলেন, এখানকার ফুটপাত দখল করে সড়কের দুপাশেই অসংখ্য শাকসবজির দোকান বসে। ফলে বড় বড় শহরের মতোই ভয়াবহ জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে সাধারণ মানুষের চলাচলের এ পথটি। 

বাগেরহাট পৌরসভার সাবেক কমিশনার এসকেন্দার হোসেন বলেন, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অসচেতনতার কারণে এ সড়কে দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাত-পা ভাঙা, পঙ্গুত্ব বরণসহ মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটে ।

বাগেরহাট পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ বাসসকে বলেন, অবিলম্বে জনদুর্ভোগ কমাতে ট্র্যাফিক পুলিশের সাথে বসে সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দিনে পণ্যবাহী ট্রাক যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সচেতনতা তৈরি, বিলবোর্ড স্থাপন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তদারকি করবে।

বাগেরহাট ডি ডি এল জি পৌর প্রশাসক ডাক্তার ফকরুল হাসান বাসসকে বলেন, বাগেরহাট পৌরসভায় নতুন একজন কর্মকর্তা আসছেন। তিনি ঘুরে ঘুরে বিষয়টির সমাধান করবেন। তিনি আশাবাদী যে অবিলম্বে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে এনে জনসাধারণের ভোগান্তির অবসান ঘটানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জুলাই জাতীয় সনদের ঐকমত্যের আইনানুগ বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আহ্বান বিএনপির
ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় বিষয়ে সবৈর্ব্য মিথ্যাচারের প্রতিবাদ
রেলওয়ের ওয়াশিংপ্লান্টে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ১০ম দিনের শুনানি মঙ্গলবার
৬৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি
আমরা সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই: সিলেটে ডা. শফিকুর রহমান
আর্থিক খাতে জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় নির্দেশিকা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ডেঙ্গু বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচেতনতামূলক বার্তা
প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই আমরা জুলাই সনদ নিতে চাই : হাসনাত আব্দুল্লাহ
অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত তহবিল ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের আহ্বান বাংলাদেশের
১০