ফলন ও দাম ভালো, রাজশাহীর বোরো চাষীদের মুখে হাসি

বাসস
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ২০:০৮
বরেন্দ্র অঞ্চলসহ রাজশাহীর সর্বত্রই শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। ছবি: বাসস

\ মো. আয়নাল হক \

রাজশাহী, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) :  রাজশাহীর কৃষকদের মুখে এখন হাসি। শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। মাঠে মিলছে ভালো ফলন, আর বাজারেও মিলছে ভালো দাম। বরেন্দ্র অঞ্চলসহ জেলার সর্বত্রই চাষিরা ধান বিক্রি করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মাঠে ফলন হচ্ছে আশানুরূপ। কৃষকরা গড়ে প্রতি বিঘায় পাচ্ছেন ২৪ থেকে ২৫ মণ ধান। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় বেশ লাভজনক।

কৃষকরা এখন উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাত ‘বিআর-২৮’ ও স্থানীয় ‘জিরা’ কাটছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে অন্যান্য জাতের ধানও কাটতে শুরু করবে।

চাষিদের মুখে হাসি

তানোর উপজেলার ধানতৈড় গ্রামের কৃষক আফসা আলী (৪৮) জানান, ‘আমি দুই বিঘা জমি থেকে ৪০ মণ ধান পেয়েছি। নিজের জমিতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা, আর বর্গা জমিতে ২৫ হাজার।’ তিনি আরও জানান, সেচের ব্যবস্থা না থাকলে খরচ বেড়ে যায়।

আরেক কৃষক, আবদুস সালাম বলেন, ‘এক বিঘা থেকে ২৫ মণ ধান পেয়েছি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি ফলন। আগামী তিন দিনের মধ্যে আরও সাত বিঘার ধান কাটব।’ তিনি আরও জানান, পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ থেকে ১,৫০০ টাকায়।

চরের জমিতেও ভালো ফলন

গোদাগাড়ী, পবা ও বাঘা উপজেলার চরের জমিতেও এবার বোরো চাষ হয়েছে। মোট ১ হাজার ৭শ’ ৬২ হেক্টর চরের জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে আশানুরূপ।

পবা উপজেলার চর খিদিরপুর গ্রামের মিরশাদ আলী বলেন, ‘চরের মাটিতে আলাদাভাবে সার দিতে হয়নি। তাই খরচও কমেছে।’

চর আষাড়িয়াদহ গ্রামের ইসমান গনি জানান, ‘চরের জমিতে এবার বোরো’র ফলন বেশি হয়েছে। অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন।’

কৃষি কর্মকর্তাদের মতামত

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, ‘আবহাওয়া ও সরকারি সহায়তার কারণে এবার ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা সন্তুষ্ট।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা শুক্রবার বাসসকে জানান, ৮ মে পর্যন্ত জেলার ২৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।

উন্নত জাতেই মিলছে সাফল্য

গোদাগাড়ী উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের কৃষক সামাদুল ইসলাম ব্রি-৯২ জাতের ধান চাষ করে প্রতি হেক্টরে ৮.৮ টন ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা স্থানীয় জাতের তুলনায় অনেক ভালো ফলন।’

একই উপজেলার হাতিবান্ধা গ্রামের জাকির হোসেন জানান, সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের কারণে আগের মৌসুমগুলোতে দাম ভালো পেয়েছেন। এজন্য এবার অনেকে বেশি জমিতে বোরো চাষ করেছেন।

তানোর উপজেলার গুবিরপাড়া গ্রামের আবু রহমান বলেন, ‘গতবার আমন-এ ভালো দাম পেয়েছিলাম। এবার ১০ বিঘা জমিতে বোরো করেছি। ফলন ও দাম দুটোই ভালো।’

ব্রি’র বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুন-অর-রশিদ জানান, রাজশাহীর জন্য উপযোগী ১৪টি বোরো জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-৫০ রপ্তানিযোগ্য উন্নত জাত, ব্রি-৫৮ উচ্চ ফলনশীল এবং ব্রি-৮৪ আয়রন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ।

তিনি বলেন, ‘আধুনিক জাতের ধানের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। এটি ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জুলাই জাতীয় সনদের ঐকমত্যের আইনানুগ বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আহ্বান বিএনপির
ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় বিষয়ে সবৈর্ব্য মিথ্যাচারের প্রতিবাদ
রেলওয়ের ওয়াশিংপ্লান্টে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ১০ম দিনের শুনানি মঙ্গলবার
৬৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি
আমরা সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই: সিলেটে ডা. শফিকুর রহমান
আর্থিক খাতে জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় নির্দেশিকা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ডেঙ্গু বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচেতনতামূলক বার্তা
প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই আমরা জুলাই সনদ নিতে চাই : হাসনাত আব্দুল্লাহ
অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত তহবিল ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের আহ্বান বাংলাদেশের
১০