শিরোনাম
পটুয়াখালী, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : ছাত্র-শিক্ষকদের অংশগ্রহণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আজ বিকেলে এক সৈকত পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)-এর ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি (আইএমএফও) এবং মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মসূচিতে পরিবেশপ্রেমী তরুণদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা সমুদ্র উপকূলের প্লাস্টিক, পলিথিন, মাছ ধরার পরিত্যক্ত জাল এবং কঠিন বর্জ্য অপসারণ করেন।
পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি চলাকালে ছাত্র-শিক্ষকদের উপস্থিতিতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এক অভিনব দৃশ্যের অবতারণা হয়। কেউ বালুর নিচ থেকে পলিথিন তুলে নিচ্ছেন, কেউ জাল সংগ্রহ করছেন। কেউ আবার শিশুদের প্লাস্টিক খেলনা সযত্নে আলাদা করছেন। যেন প্রতিটি হাত একেকটি প্রতিশ্রুতি। তাদের নীরব কর্মযজ্ঞ সমুদ্রকে যেন এই বার্তা দিচ্ছিলো যে, ‘আমরা দায় নিচ্ছি আমাদের সমুদ্রের, আমাদের পৃথিবীর।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম সৈকত পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির উদ্বোধনকালে বলেন, ‘সমুদ্রের ডাক শুধু প্রকৃতির নয়, এটি একটি নৈতিক আহ্বান। একে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি যে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা পেরিয়ে দেশের উপকূলীয় ভাবনায় আলোকপাত করবে। শিক্ষার্থীরা যখন পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে, তখন আমরা আমাদের নিরাপদ ভবিষ্যতের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারি।’
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)’র সদস্য অধ্যাপক ড. মাসুমা হাবিব বলেন, ‘শিক্ষা শুধু শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সংলাপে, সমাজের সেবায় প্রকাশ পায় তার পূর্ণতা। পবিপ্রবির ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি’ এই শিক্ষার ব্যঞ্জনা বাস্তবে রূপ দিয়েছে। তাদের এই আয়োজন নিঃসন্দেহে দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে।’
পবিপ্রবি’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন, ‘কুয়াকাটা কেবল একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি একটি প্রাণপ্রবাহ। যেখানে প্রকৃতি, জীবন ও জীববৈচিত্র্য একত্রে বেঁচে থাকে। এই সমুদ্রকে রক্ষা করা মানে আমাদের জাতিগত পরিচয়কে সংরক্ষণ করা। আমাদের শিক্ষার্থীরা এই বার্তা হৃদয়ে ধারণ করছে, এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।’
কর্মসূচি শেষে এক সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তারা বলেন, প্লাস্টিক ও কঠিন বর্জ্য আজ সমুদ্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যেমন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি সমুদ্রের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বক্তারা এ সংকট মোকাবেলায় নীতিনির্ধারকদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, জনগণের সচেতনতা এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার ওপর জোর দেন।
পবিপ্রবি এর আগেও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নানা কর্মসূচি পালন করেছে। তবে আইএমএফও’র আজকের আয়োজন ছিল যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক প্রেমপূর্ণ মৈত্রীচুক্তি। এখানে কোনো স্লোগান ছিল না। ছিল দায়িত্বের প্রতিধ্বনি। প্রকৃতির প্রতি যে প্রেম গভীর, তার সুরক্ষা নিয়েই জাগে মানবিক বোধ। পবিপ্রবির তরুণরা তা প্রমাণ করল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই নীরব, কিন্তু প্রতিনিয়ত দৃঢ় প্রত্যয়ে আন্দোলিত । আর আইএমএফও হয়ে উঠল সেই নেতৃত্বের মশাল।
‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি’ পবিপ্রবির একটি অগ্রণী গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান পাঠদানের পাশাপাশি দেশের সমুদ্র সম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় গবেষণা ও সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। সমুদ্র বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানবিক দায়বদ্ধতার অনন্য মেলবন্ধন ঘটিয়ে এই ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যেই সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কুয়াকাটা সৈকতে পরিচালিত আজকের এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আবারও দেখিয়ে দিল, তারা শুধু সমুদ্র অধ্যয়ন করে না, সমুদ্রকে ভালোও বাসে।
কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে পবিপ্রবি’র ট্রেজারার প্রফেসর মো. আবদুল লতিফ, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্ট্যাডিজের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, আরটিসি’র পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মামুন-উর-রশিদ, রেজিস্ট্রার ও আইকিউএসি পরিচালক প্রফেসর ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন, ইএসডিএম অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মুহসিন হোসেন খান, মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. সাজেদুল হক, মৎস্য বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ইনোভেশন সেন্টারের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আবু ইউসুফসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন ।
