শুকনো মৌসুমেও ভাঙছে তিস্তা; অবৈধ বালু উত্তোলনে ভাঙন প্রকট

বাসস
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১৩:১৮
ছবি : বাসস

।। রেজাউল করিম মানিক।।

রংপুর, ২০ মে, ২০২৫ (বাসস) : শুকনো মৌসুমেও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। শংকরদহ ও ইছলি গ্রামের অন্তত ৮০ একর জমি ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের ৭টি পরিবার। নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারানোর আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকাবাসীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু তোলা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতা ভাঙন পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

শুধু গঙ্গাচড়াই নয়, তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়েছে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের বাসিন্দারাও। গত ১৫ দিনে গ্রামগুলোর অন্তত ৮টি বসতঘর এবং প্রায় ৫০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবাধে বালু উত্তোলনই নদীভাঙনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে শংকরদহ ও ইছলি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যেখানে আশ্রয় নিয়েছে, ভাঙন তার কাছাকাছি চলে এসেছে। এতে নতুন করে শঙ্কায় রয়েছে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্যালো মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলায় নদীভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, “বালু তোলার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিছুই জানেন না। তবে সরকারি কাজেই বালু তোলা হচ্ছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললেই হবে।”

শংকরদহ গ্রামের বাসিন্দা আলেমা বেগম বলেন, “এমনিতেই আমাদের এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন আবার গঙ্গাচড়ার ইউএনও মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু তুলছেন। সরকারি লোকজন বালু তুললে আমাদের কী করার আছে!”

নদীভাঙনে ৫০ বিঘা জমি হারিয়েছেন কাকিনাবাজারের জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, “একসময় আমার ৮০ বিঘা জমি ছিল। নদীতে যেতে যেতে এখন আছে মাত্র ৩০ বিঘা। ৩২ বার আমার বাড়ি ভেঙেছে। নদীর পাড় ছেড়ে এখন অন্য জায়গায় বসবাস করছি। ভাঙন রোধে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে আমাদের কিছু জমি ও বাড়িঘর রক্ষা পেত।”

ইছলি গ্রামের হাজরা বেগম বলেন, “নদীতে বাড়ি বিলীন হওয়ায় তিন বছর আগে এখানে এসে বাড়ি করি। এখন এদিকেও ভাঙন শুরু হয়েছে। আমার এক বিঘা ভুট্টার খেত বিলীন হয়ে গেছে। সামনে কী হবে আল্লাহ জানেন। সরকার যদি এবার বাঁধ দিয়ে দিত, তাহলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম।”

উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “আসলে ওই এলাকাটা বালুময়। নদীর গতিপথ কখন পরিবর্তন হয় তা বোঝা মুশকিল। অনুমান করে বলা যায় না, কত একর ফসলি জমি নষ্ট হতে পারে।”

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদাসীনতার কারণে পুরো গ্রাম নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বর্ষা শুরু হলে নদী ভাঙতে ভাঙতে যেকোনো সময় সড়কে চলে আসবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউএনওকেও আমরা জানিয়েছি। শ্যালো মেশিন লাগিয়ে সরকারি জমিতে বালু উত্তোলনের নিয়ম নেই। সে জন্য বালু তোলা বন্ধ করে দিয়েছি। শ্যালো মেশিনও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”

অন্যদিকে, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী বাসসকে জানান, তার ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ১৫ দিনে কমপক্ষে ৪টি বসতবাড়ি এবং প্রায় ২০ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারও অভিযোগ, বালুখেকোরা বালু তোলায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়ার ইউএনও মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, “ওই এলাকার মেম্বারকে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম। কালন ওই কাজের সভাপতি হচ্ছেন মেম্বার। কিন্তু অভিযোগ পেয়েছি, টাকা বাঁচানোর জন্য নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলেছেন তিনি। আমি তার বিরুদ্ধে লিখিত দেব। খবর পাওয়ার পর শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে দিয়েছি। এর সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগ-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে আমরা তাগাদা দিচ্ছি। বর্তমানে নদীরক্ষা বাঁধের ৪৫ কিলোমিটার কাজ পেয়েছি। এর মধ্যে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নও আছে। ১৯ কিলোমিটার বাঁধের নির্মাণকাজ চলছে, আগামী জুনে শেষ হবে। বাকি ২৬ কিলোমিটার আগামী বছর করব। তখন লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের নদীরক্ষার কাজও হবে।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে ডিএমপি’র আহ্বান
ব্রিটিশ কাউন্সিল ‘কানেকশনস থ্রু কালচার গ্রান্টস ২০২৫’ অনুদানের আবেদন গ্রহণ শুরু 
প্রেমিকার শিরশ্ছেদকারী প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড বহাল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বৃদ্ধি নগর ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলছে : কেসিসি প্রশাসক
শিবলির সেঞ্চুরিতে প্রথম দিন বাংলাদেশের
নৌবাহিনীর অভিযানে নাবিক ভর্তির প্রতারক চক্রের ৯ সদস্য আটক 
তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়ার মূল চালিকাশক্তি : আসিফ মাহমুদ
আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ কর্মবীর ছিলেন : জামায়াতে ইসলামীর আমির
কক্সবাজারে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদনে জেলাবাসীর আনন্দ-উচ্ছ্বাস
৩৭ বছর পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবেন দুই বাংলাদেশি সাঁতারু
১০