কুষ্টিয়া, ২১ মে, ২০২৫(বাসস) : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, আমাদের জাতীয় কবি নজরুল তার সাহিত্যের ভাববস্তুতে সাম্য, মানুষের মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছিলেন। এই আত্মশক্তি ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তি ভূমি।
উপাচার্য বলেন, নজরুল সবসময়ই মানুষকে জাগাতে চেয়েছিলেন এবং বাঙালী বার বার নজরুল দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছেন। ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনেও ছাত্র-জনতা নজরুলের সংগ্রামী চেতনা দ্বারা উদ্দীপ্ত ছিল।
ভিসি বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নজরুল জয়ন্তী ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
তিনি বলেন, বাঙালীর যে হাজার বছরের পরাধীনতা, সেখান থেকে মুক্তির কথা বলেছেন বহু কবি,সাহিত্যিক। শুনিয়েছেন জাগরণের গান। সাম্যের কবি, মানবতার কবি, বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তাদের অগ্রগণ্য। ঘুম ভাঙ্গার গান তিনিই প্রথম শুনিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম এয়াকুব আলী, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
বক্তব্য রাখেন, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এমতাজ হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. মনজুর রহমান।
সেমিনারে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল গবেষক ও দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার।
উপাচার্য বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যেসব মূল্যবোধ আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, তার সবকিছুই নজরুল-সাহিত্য বা নজরুলের মূল্যবোধের মধ্যে বিদ্যমান। তাই তাকে আমরা জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলাম। তবে স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসে আজ যদি হিসাব করি, কতটা পৌঁছাতে পারলাম সেই মূল্যবোধের কাছে, অনেকটা হতাশা হতে হবে বৈকি। তিনি সবাইকে নজরুল চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক, কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, নজরুল চিন্তায়ও যেমন ছিলেন, তার কর্মেও তেমনটি প্রতিফলন ঘটেছে। তার যে সর্বমানবিকতা বোধ অর্থাৎ নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান সবার ব্যক্তি ও সামষ্টিক সত্তার সম্মিলনে যে ‘অভেদসুন্দর’ সাম্য সৃষ্টির কথা বলেছিলেন সেটা বিশ্ব সাহিত্যে খুবই গৌরবের। তাইতো তিনি চিরসুন্দর সাম্যবাদী কবি, সাম্যবাদের কবি।
তিনি বলেন, কাজী নজরুল বাঙালির স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কতগুলো সূচক বক্তব্য দিয়েছেন। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, বাঙালি যেদিন এক হয়ে বলতে পারবে বাঙালির বাংলা, সেদিন সে অসাধ্য সাধন করবে। বাঙালি একাই সেদিন ভারত স্বাধীন করবে। স্বাধীনতার জন্য আমাদের কী করতে হবে, এই প্রবন্ধের শেষ দিকে নজরুল তার উপায় বলে দিয়েছেন। তার মত হলো, বাঙালিকে তার বীরসত্তার প্রকাশ ঘটাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশ থেকে মানবিক বৈষম্য দূর করা দরকার। এখানে নানা বিষয়ে নানা মত-পথ থাকে।
মানবিক বৈষম্য দুর করতে কবি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল, রাজনীতিক, লেখক, সংস্কৃতিকর্মীসহ সবার এক জায়গায় আসতে হবে। সেই পরিবেশ বজায় রাখতে না পারলে আমরা আবার ভুল পথে হাঁটব। আর এটা হলে তা হবে দেশের নতুন বিপ্লবের আকঙ্খার মৌলিক আদর্শের বিরুদ্ধাচরণ।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় কবিকে যথাযথ মর্যাদা তখনই আমরা দিতে পারবো যখন তার স্বপ্ন পূরণ হবে। তার আকঙ্খা বাস্তবায়িত হবে। তিনি নজরুলের উপর পঠন-পাঠন ও গবেষণা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমাদের জীবনে নজরুলকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তুলতে হবে।
ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আদর্শিকভাবে নজরুলকে হৃদয়ঙ্গম করা ও বাস্তবজীবনে কর্মে রুপান্তরিত করার ওপর গুরুত্বদেন। তিনি বলেন, দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে কবি নজরুল মানুষের যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন সেটা প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশে এখন পুরোপুরি বিরাজমান।