ক্ষুদ্রঋণের মানবিক অর্থনৈতিক দর্শন বিশ্বকে আশান্বিত করেছে : ফারুক ই আজম

বাসস
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১৮:৪৩
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস) : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, বিশ্ব সভ্যতায় এক নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার প্রবক্তা ও প্রবর্তন এই চট্টগ্রাম থেকেই উদ্ভাবিত হয়েছে। এই মানবিক অর্থনৈতিক দর্শন বিশ্বকে চমকিত ও আশান্বিত করেছে।

তিনি বলেন, ‘সমাজতান্ত্রিক কিংবা পুঁজিবাদী বিশ্ব-সর্বত্র অনুসন্ধিৎসার সঙ্গে এই নব্য অর্থনীতির জ্ঞান ও ধারণা আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একাডেমিক কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’

উপদেষ্টা আজ চট্টগ্রাম কলেজ আয়োজিত ৭ম ইকনোমিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৫, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বাংলাদেশ ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াডের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ড. শাহাদাত হোসেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বক্তৃতা করেন।

উপদেষ্টা বলেন, মাইক্রোইকোনমিক্স, সামাজিক ব্যবসা এবং সমস্যার সমাধানভিত্তিক ব্যবসা - এই ধারণাগুলোর জন্মও হয়েছে চট্টগ্রামের মাটি থেকেই। এখানেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার সূচনা, যা পরবর্তীতে ‘দরিদ্রদের জন্য ব্যাংকিং’ এবং মাইক্রোক্রেডিট নামে বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করে। এখান থেকেই নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণাটি বিশ্বজয় করে। আজকের দুনিয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানভিত্তিক উদ্যোগ-যেমন ‘প্রবলেম সলভিং বিজনেস’ ধারণাও-চট্টগ্রাম থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ট্রাস্ট-বেইজড ব্যাংকিং’ ধারণা। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেখানে জামানত, সম্পদ ও প্রতিশ্রুতি মুখ্য, সেখানে ট্রাস্ট-বেইজড ব্যাংকিং মানুষের বিশ্বাসকে মূলধন হিসেবে বিবেচনা করে। এই অনন্য ধারণাটিও চট্টগ্রাম থেকেই উৎসাহিত হয়েছে এবং এটি মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নৈতিক অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এই নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার তত্ত্ব ও প্রয়োগই বাংলাদেশকে প্রথম নোবেল জয়ের গৌরব এনে দিয়েছে। আমাদের গ্রামীণ ব্যাংক ও এর উদ্ভাবক প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন।

ফারুক ই আজম বলেন, বিশ্ব ব্যবসা জগতেও আমরা অভিনব বিকল্প দিয়েছি। ব্যক্তিগত মুনাফা-কেন্দ্রিক ব্যবসার সমান্তরালে সমাজকল্যাণভিত্তিক সামাজিক ব্যবসার দর্শন এক অনন্য মানবিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, যা সারা বিশ্বে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক সাম্য ও মানবিকতা বিকাশে এই পদ্ধতি প্রতিটি মানুষের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-এসব তাত্ত্বিক ও উদ্ভাবনী ধারণার ব্র্যান্ডিং হওয়া উচিত চট্টগ্রাম থেকেই। ভবিষ্যতের তরুণ অর্থনীতিবিদেরা এইসব ধারণার ধারক হয়ে বিশ্বের আনাচে-কানাচে নতুন অর্থনীতির ব্যবস্থা ও জ্ঞান ছড়িয়ে দেবেন। কারণ, একটি শহরের ইতিহাস, অবদান ও আত্মার সাথে যখন আধুনিক চিন্তার সমন্বয় ঘটে, তখন তা শুধু আঞ্চলিক নয়-জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচয়ে রূপ নেয়।

উপদেষ্টা বলেন, এই অলিম্পিয়াড আমাদের তরুণদের শুধু মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্র নয়, বরং অর্থনৈতিক নেতৃত্ব, নীতিনির্ধারণ, বাজেট বিশ্লেষণ এবং টেকসই উন্নয়নের জ্ঞান অর্জনের এক উৎকর্ষ মঞ্চ। আজকের শিক্ষার্থীরা যেন শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তব জগতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হয়- এই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নির্যাতন করার শক্তিকে সাংবিধানিক ক্ষমতা মনে করতো আওয়ামী লীগ : আইন উপদেষ্টা
হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণে লেবাননের কার্যকর পদক্ষেপ চায় যুক্তরাষ্ট্র : দূত
‘ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় অংশীজনের সমন্বিত ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে
কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠান আগামীকাল
নিউইয়র্কে তথ্য উপদেষ্টার ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর আন্তঃঘাঁটি স্কোয়াশ প্রতিযোগিতা সমাপ্ত
৪৯ তম জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে অঞ্চল-১’এ চারজন শীর্ষে
ভূমি দস্যুদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সিলেটে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় সিআইডির তদন্ত শুরু
১০