ঢাকা, ১৭ জুন, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ আজ বলেছেন, সংস্কার করার মধ্য দিয়ে নতুন গন্তব্যে পৌঁছাতে চায় বিএনপি।
আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা পর এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, "আমরা চাই সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের নতুন গন্তব্যে পৌঁছাই, এবং আমাদের সেই শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করি। আলোচনার মাধ্যমে অন্ততপক্ষে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সকলে মিলে দাঁড়াতে চাই, যেন সংস্কারের বিষয়গুলো সমাপ্ত করতে পারি।
এখন পর্যন্ত যতটুকু আলোচনা হয়েছে তার ভিত্তিতে বিএনপি সন্তুষ্ট কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি সহাস্যে জানান, "সন্তুষ্ট হবো কি হবো না-সেটা আলোচনা শেষ হলে জানানো হবে। আমরা চাই জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হোক এবং আমরা সবাই একটা জায়গায় আসি। জুলাইয়ের মধ্যে একটা জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হতে পারে।"
আজকের আলোচ্য বিষয় কি ছিল তা জানতে চাইলে তিনি জানান, বিগত দিনের আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে আমাদের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৭০ অনুচ্ছেদে সবাই দুইটা বিষয় একমত হয়েছে। তা হল আস্থা ভোট ও অর্থবিল-এ দুটি বিষয় বাদে ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে দলের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু আমাদের আরেকটা অবস্থান আছে, আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল তার সাথে সংবিধান সংশোধনী বিলের বিষয়টি যুক্ত করেছেন এবং আমরাও করেছি। লিখিত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছিল জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় (যুদ্ধ পরিস্থিতির মত কোন বিষয় থাকলে) সেক্ষেত্রেও সংসদ সদস্যগণ স্বাধীন থাকবেন না।
তিনি জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আস্থা ভোট ও অর্থ বিল এর বিষয়টি জাতীয় সনদে উল্লেখ থাকবে, সবাই স্বাক্ষর করতে পারবেন।
তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা গেছে। পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেশন কমিটি ও পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি- এ চারটি কমিটি সহ অন্যান্য কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের সংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে বিরোধী দলের সদস্যরা পাবেন। এ বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত হয়েছেন।
আজকের আলোচ্য সূচি অনুযায়ী নারী আসন নিয়ে আলোচনার সার সংক্ষেপ প্রশ্নে তিনি জানান, এ বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা হচ্ছে। তবে, ১০০টি নারী আসন সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে মোটামুটি সবাই অনুরূপ মতামত দিয়েছেন। তবে এর নির্বাচন পদ্ধতি কি হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা এবং বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুতের লক্ষ্যে আজ থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা।
সকাল এগারোটা চল্লিশ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
আলোচনায় কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুব মিয়া, মো. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এছাড়াও, বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে ডা. মুশতাক হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তবে, আমন্ত্রণ পেলেও বৈঠকে উপস্থিত হননি জামায়াতে ইসলামির কোনো প্রতিনিধি।
এর আগে, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, আজকের আলোচনা সভার আলোচ্য সূচিতে রয়েছে- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, আইনসভায় নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন এই তিনদিন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। ১৮ ও ১৯ জুনের আলোচ্য সূচি পরে জানানো হবে।