ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিধিমালায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার বন্ধ, বিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা ও প্রচার প্রচারণায় পরিবেশ বান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সপ্তম কমিশন সভায় আচরণ বিধিমালার খসড়া অনুমোদন করা হয়। সভায় সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকের বলেন, ‘খসড়া আচরণবিধি আজ কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। এর কয়েকটি বিষয় রয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন ও ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সে জন্য এ বিধিমালার খসড়া শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধি সংক্রান্ত আলোচনায় উল্লেখযোগ্য যে বিষয়গুলো এসেছে তা হলো- প্রথমত গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিও’র ধারা ৯১ (ঙ) তে প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি ইতোঃপূর্বে আচরণবিধিতে সন্নিবেশিত ছিল না। এটা সন্নিবেশ করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না, এটা অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। পোস্টার ব্যবহার বাদ দেওয়ার ব্যাপারে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল। এতে আমরাও একমত হয়েছি। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন ব্যবহার করতে পারবে, এ সব নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সভায় আলোচ্যসূচিতে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ ছিল। আরেকটি বিষয় ছিল জাতীয় সংসদে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনা। প্রথম এজেন্ডা আজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ হবে।’
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরকেও যোগ করা হয়েছে। তারা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে না। তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুবিধার ব্যবহার, যেমন- সার্কিট হাউস, ডাক বাংলো ও রেস্ট হাউস এ সবের ওপরে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রচার প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহারের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। ভোটার স্লিপ ইন্ট্রোডিউস করার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে যে অতীতে বিধিনিষেধ ছিল। এটা একটু শিথিল করা হয়েছে।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর বিশদ আলোচনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কি পারবে, কি পারবে না- তা ডিফাইন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে বিদেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না।
মাইকে প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিমেলে রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রচারণার সময় তিন সপ্তাহ থাকছে। টিভিতে সংলাপের সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সকল প্রার্থী সভাপতি বা সদস্য হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন বা মনোনীত হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর, সেখান থেকে পদত্যাগ করতে হবে।’
সানাউল্লাহ বলেন, বিধিমালা লঙ্ঘনে যে নরমাল শাস্তি ছিল, ছয় মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। এবার জরিমানা সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামা নতুনভাবে সংযোজিত করা হয়েছে। দল ও প্রার্থী উভয়ই একটা হলফ নামা দেবে যে, তারা এই আচরণ বিধিমালা মেনে চলবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘কমন প্লটফর্ম বলতে- রিটার্নিং অফিসাররা সংশ্লিষ্ট আসনের সব ক’জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম থেকে একদিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবে। এছাড়া বিভিন্ন টিভি মিডিয়াতে যে ডায়লগের আয়োজন করে, তাতে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।’