ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আড়িয়াল বিলকে হয় একটা জলাভূমি কেন্দ্রিক সংরক্ষিত এলাকা অথবা বিশেষ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকা ঘোষণা করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পান্থপথে পানি ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘আড়িয়াল বিল এলাকার জীবনযাত্রার মান এবং পানি ও ভূমি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পের ফলাফলের উপর অনুষ্ঠিত এক জাতীয় কর্মশালায় সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
পানি উপদেষ্টা আড়িয়াল বিলে মৎস্য অধিদপ্তরের নির্মিত ৮ টা বন্ধ খাল যেগুলো ক্লোজার করে রাখা হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে খুলে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সমন্বিতভাবে কাজ করা নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আড়িয়াল বিল এলাকার গ্রাম ও মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় জনগণের মতামত নিয়ে আমরা আড়িয়াল বিল সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রকল্প গ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, আড়িয়াল বিলকে একটা প্রটেক্টেড এরিয়ার মর্যাদা দিয়ে, দাগ-খতিয়ান ধরে একটা গেজেট করে দেব। একটা প্রটেকশন স্ট্যাটাস বা সংরক্ষিত মর্যাদা আড়িয়াল বিলকে দিতে হবে, তা না দেয়া পর্যন্ত এই বিলের ধ্বংসযজ্ঞটা আমরা কমাতে পারবো না। অন্যদিকে, বেলাই বিল এবং চলন বিলকেও জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে আমাদেরকে বিবেচনা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পানিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, নদ-নদীকে নষ্ট করে আমরা উন্নয়ন করতে পারি না। দরকার হলে আমরা অনেক দূর ঘুরে যাব কিন্তু খাল বা নদীর উপর বাঁধ দিয়ে যাওয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে সে জায়গা থেকে সবাইকে সরে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান কর্মশালায় উপস্থিত মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসককে আড়িয়াল বিলের ভিতরে মৎস্য চাষের জন্য খালের ওপর বেআইনিভাবে নির্মিত অপরিকল্পিত মাটির বাঁধগুলো তালিকা করে অবিলম্বে অপসারণ করার নির্দেশ দেন এবং যে বাঁধগুলো চলাচলের জন্য করা হয়েছে, সে বাঁধগুলো কেটে দিয়ে খালের ওপর বাঁশের পথ তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশনাও দেন তিনি।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, প্রথম পর্যায়ে আড়িয়াল বিলে যে-সব স্থানে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে, সেই বাঁধাগুলো অপসারণ করার পাশাপাশি প্রয়োজনে ড্রেজিং করা হবে। বিলের ৫৩৯০ হেক্টরের মধ্যে সরকারের খাস খতিয়ানে থাকা ৭১.৭৭ হেক্টরকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা বা সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা যেতে পারে বলে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘এ বিলের ভিতরে খালের ওপর দেয়া অবৈধ মাটির বাঁধ অপসারণ করে মানুষের চলাচলের জন্য কিছু ছোট ছোট সেতু অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য সড়ক বিভাগকে আমরা অনুরোধ করব।’
পানি সম্পদ উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আগামী এক মাসের মধ্যে আড়িয়াল বিল সম্পর্কে একটি কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন। সেই সঙ্গে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আড়িয়াল বিল প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয়রাসহ গরীব কৃষক যেন উপকৃত হয় সে বিষয়টি আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে।
সম্মানিত অতিথি শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আড়িয়াল বিলে পরিবেশ রক্ষা করে মানুষ এবং প্রকৃতির উপকারে আসবে সেই পদক্ষেপ আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল হাসান। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব ) মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান।
দিনব্যাপী কর্মশালার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন আইডব্লিউএম এর সেচ, পানি ও জলাভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক গৌতম চন্দ্র মৃধা।