দেশি-বিদেশি অস্ত্র, র‌্যাবের পোশাকসহ কক্সবাজারের সন্ত্রাসী ফারুক গ্রেপ্তার

বাসস
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ২০:০২

কক্সবাজার, ৩০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : কক্সবাজারের উখিয়ার মরিচ্যা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী ফারুককে অস্ত্র, র‌্যাবের পোশাকসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৫ এর একটি দল। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল  কামরুল হাসান এই কথা জানান।

গ্রেপ্তারকৃত মোহাম্মদ জায়েদ হোসেন ফারুক (২২) উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা এলাকার আবদুস শুক্কুরের ছেলে।

অভিযানকালে অপহরণে ব্যবহৃত চারটি র‌্যাবের পোশাক, একটি র‌্যাবের ফেইক আইডি কার্ড, একটি হ্যান্ডকাপ, একটি বিদেশি পিস্তল, দু’টি দেশীয় অস্ত্র, ১০ রাউন্ড তাজা গোলাবারুদ, ১১ রাউন্ড এমটি কার্টিজ ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

এরআগে বহিষ্কৃত সৈনিক মো. সুমন মুন্সী ছাড়াও আফ্রিদি, আব্দুল গফুর, শিকদার ডাকাতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১১ জুন রাত ১১টায় ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মোহাম্মদ রহিমুল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ হাফিজ উল্লাহকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। রোহিঙ্গা এনায়েত উল্লাহ ও নবী হোসেনের সহায়তায় ভিকটিমকে নিজ বসতঘর হতে ডেকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী পাহাড়ে নিয়ে যায় চক্রটি। পরে অপহৃতের পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।

এই খবর পেয়ে র‌্যাব-১৫ ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৩ জুন বিকেলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি চৌকস দল রঙ্গিখালীতে অপহরণের অন্যতম প্রধান হোতা ডাকাত সর্দার শাহ আলমের বাড়িতে হানা দিয়ে আফ্রিদি ও আব্দুল গফুর নামে দু’জন সন্দেহভাজনকে আটক করতে সক্ষম হয়।

এরপর শনিবার বিকেলে উখিয়ার মরিচ্যা বাজার থেকে বরখাস্ত সৈনিক মো. সুমন মুন্সিকে আটক করে। সুমনের মাধ্যমে অপহরণকারী ডাকাত শাহ আলম, সন্ত্রাসী রাকিব এবং সন্ত্রাসী শিকদারকে ভিকটিম হাফিজ উল্লাহকে ছেড়ে দেয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু, আহ্বানে সাড়া দেয়নি চক্রটি। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএন ও বনবিভাগের ২৫৬ জন জনবল নিয়ে ভিকটিমকে আটকে রাখার সম্ভাব্য গহীণ অরণ্যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে।

এক পর্যায়ে অপহরণের ৭২ ঘণ্টা পর ভিকটিম হাফিজ উল্লাহকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র, ৩ রাউন্ড এ্যমুনেশনসহ র‌্যাবের ইউনিফর্ম ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।

এই ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করা হয় জানিয়ে লে. কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে র‌্যাব ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অভিযানের অংশ হিসেবে অপহরণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কুখ্যাত ডাকাত শিকদারকে রোববার গ্রেপ্তার করা হয়।’

শিকদারের দেয়া তথ্য মতে সন্ত্রাসী ফারুককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বরখাস্তকৃত সৈনিক সুমন কয়েক বছর আগে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট থেকে র‌্যাবের ইউনিফর্মগুলো তৈরি করেছে। সন্ত্রাসীরা বর্ণিত ইউনিফর্মগুলো ব্যবহার করে নানা সময়ে র‌্যাবের পরিচয়ে অপহরণ করে আসছিল। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যবহৃত পোশাক ব্যক্তিগতভাবে তৈরি এবং ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ।

এ ইসময় লে. কর্নেল কামরুল হাসান দেশের সব টেইলার্স ও পোশাক প্রস্তুতকারী কোম্পানিদের সতর্ক করে এই ধরণের অপরাধ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানান এবং অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, হাফিজুল্লাহ অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের আটক করতে পারলেও এখনো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও কুখ্যাত ডাকাত শাহ আলমসহ কয়েকজন ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন। পলাতক সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান  অব্যাহত রয়েছে।

র‌্যাব ও পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, টেকনাফ উপজেলার পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণকারী চক্রের আলোচিত নাম আবুল আলম ও শাহ আলম নামে দুই সহোদর। তারা টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালি এলাকার গাজীপাড়া গ্রামের আবদুল মজিদ ওরিফে ভোলাইয়া বদ্দ্যের ছেলে।

যার মধ্যে আবুল আলম (৪২) এর বিরুদ্ধে অস্ত্র, অপহরণ, মানবপাচার মাদকসহ নানা আইনে রয়েছে ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। শাহ আলম (৩৬) এর বিরুদ্ধে একই ধরনের অপরাধের ২৮টির বেশি মামলা রয়েছে। তারা দুই ভাই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক একটি বাহিনী পরিচালনা করে ডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, নির্যাতনসহ নানা অপরাধ করে আসছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে নবী হোসেনসহ চিহ্নিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী এবং স্থানীয় অপরাধীরা।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে বহিষ্কৃত সৈনিক মো. সুমন মুন্সীসহ একটি চক্রের র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনা জানাজানি হয়। এরপর প্রকাশ্যে আসে চক্রের প্রধান দু’জনের নাম।

ঘটনার পরে থেকে র‌্যাব ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে গত ১৩ দিনে বহিষ্কৃত সৈনিক সুমনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে র‌্যাবের পোশাকসহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন এই নিয়ে গত সাড়ে ১৭ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫৬ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সুফিয়া কামাল হলে সংযুক্ত শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিল ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ
রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে মামলা ২,০৩৪ টি
হাওর মাস্টারপ্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা হালনাগাদকরণের প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত করা হবে : পানি সম্পদ উপদেষ্টা
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
অনিয়ম, হয়রানি, দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের তিন এনফোর্সমেন্ট অভিযান
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের জন্য আগামীকাল দেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া 
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার
রাসিকের ৮০৬ কোটি টাকার বাজেট 
ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো যাবে না: মৎস্য উপদেষ্টা
ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়ে রায় দেবেন বিচারকরা
১০