ঝিনাইদহে পানির নিচে ২০ গ্রামের ফসলি জমি

বাসস
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৫:১৩
নদীতে বাঁধ দিয়ে ডাইভারসন করায় ঝিনাইদহে পানিতে ডুবে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি । ছবি: বাসস

।। শাহজাহান নবীন।।

ঝিনাইদহ, ২৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সেতু নির্মাণে ধীরগতি ও ভরা মৌসুমে নদীতে বাঁধ দিয়ে ডাইভারসন করায় ঝিনাইদহের অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কয়েক হাজার হেক্টর জমি পানিতে ডুবে গেছে। তাই ডাইভারসন বাঁধ সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। 

জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের কোলা বাজারে নির্মাণাধীন সেতুর ডাইভারসন বাঁধের কারণে নদীর স্রোত ও সাভাবিক পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিলের পানি কমছে না। এতে সদর ও কালীগঞ্জের অন্তত ৪টি বিল ও খালের পানি আটকে গেছে বেগবতী নদীতে।

আবার প্রবাহমান বেগবতীর উজানে ফুলে উঠেছে পানির স্তর। ফলে নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠে পানি আটকে আছে দিনের পর দিন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ও মহারাজপুর ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ পানিতে থই থই করছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত। 

এ সময় স্থানীয়রা জানান, বিলের পানি বের হয় সিরিসকাঠ খাল হয়ে। সেই খালের সংযোগ ঘটেছে বেগবতী নদীতে। কিন্তু বেগবতী নদীর নলডাঙা বাজার ও কালীগঞ্জের কোলা বাজারে সেতু নির্মাণের ডাইভারসন বাঁধ রয়েছে। নদীর পানি বের হওয়ার জন্য বাঁধে রাখা হয়েছে মাত্র ৩৫ ফুট চওড়া জায়গা। দেয়া হয়েছে কাঠের সেতু। পানির তীব্র স্রোত ও চাপ সৃষ্টি হলে যেকোনো সময় সেতুটি ভেসে যেতে পারে।  

সদর উপজেলায় দেখা যায়, গান্না, হরিপুর, মহারাজপুর, কুলবাড়িয়া, ভাদালডাঙ্গা, বেতাই, কুঠিদুর্গাপুর, ডেফলবাড়ি, বিষয়খালী, কেশবপুরসহ অন্তত ২০ গ্রামের ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। 

ডাকবাংলা, বাদপুকুরিয়া, মামুনশিয়া, নাথকুণ্ডু, রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামেও দেখা দিয়েছে প্লাবন। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বিল ও খালপাড়ের বাসিন্দারা।

মহারাজপুর গ্রামের কৃষক নিখিল কুমার ও সাহেব আলী বলেন, বেগবতী নদীতে কোলা বাজারে ব্রিজ করার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়েছে ঠিকাদাররা। যে কারণে নদী দিয়ে পানি নামছে না। আমরা ধান লাগিয়ে বিপাকে পড়েছি। পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। জমিতে গলা সমান পানি।

দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক সাবদার বিশ্বাস ও বিল্লাল হোসেন বলেন, আমরা ধান লাগিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছি। হাজার হাজার কৃষক হাহাকার করছে। ২০ গ্রামের অন্তত আড়াই হাজারে হেক্টর জমির ধান পানির নিচে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহের অন্যতম বৃহত্তম বিল হামোদর বিল। এই বিল ও বিল ঘেঁসা মাঠগুলোতে বোরো মৌসুমে অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। কিন্তু এবছর বিলে জমা বৃষ্টির পানি বেগবতী নদী দিয়ে বের হতে পারছে না। 

মহারাজপুর কৃষক সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বলেন, বিলের পানি বের হওয়ার জন্য সাময়িক ভাবে নদীর বাঁধ তুলে দেয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু ঠিকাদাররা কর্ণপাত করছে না।
 
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিজানুর রহমান কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আব্দুল খালেক বলেন, নদীতে ডাইভারসন করা হলেও পানি বের হওয়ার জায়গা আছে। তবে পানি একটু কম বের হচ্ছে। ধান যেমন লাগবে, ব্রিজও তো লাগবে।

প্রবাহমান নদীতে ডাইভারসন বাঁধ নির্মাণের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানেই এই কর্মকর্তা বলেন, ৪০ ফুট চওড়া কাঠের ব্রিজ বানানো হয়েছে। যার নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। কিন্তু নদীর প্রস্থ প্রায় দেড়শ ফুট। পানি বের হওয়ার জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা নদীর ডাইভারশন বাঁধ সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন। আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দ্রুতই সমাধান হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্কবিষয়ক বৈঠক চলছে
ডাকসু, রাকসু ও জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় প্রশাসনকে শিবিরের ধন্যবাদ
কমিউনিটিভিত্তিক মডেলে মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনা করবে ডিএনসিসি
ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
৬ষ্ঠ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্কোয়াশ ওপেনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
আগামী ৩ কার্যদিবসে দপ্তর সমূহে ওয়েবসাইট না থাকার ব্যাখা চেয়েছে মাউশি
পাবনায় রাইস এজেন্সির মালিকের কাছে চাঁদা দাবি, আটক ২
২৮ জুলাই ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের সময় অগ্নিকাণ্ডের কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি
১০০ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের ‘ড্র’ ৩১ জুলাই
পাঁচ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র হতেই হবে : নাহিদ ইসলাম
১০