তরুণদের হাত ধরেই শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠিত হবে : তারেক রহমান 

বাসস
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ২২:০৮
রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান। ছবি: বাসস

ঢাকা, ৩ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): বিগত দেড় দশকে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেওয়া শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ তরুণদের হাত ধরেই গঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

তিনি বলেন, ‘আজকে আমার সামনে উপস্থিত লাখ লাখ তরুণ-তোমরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে তোমরাই প্রতিষ্ঠিত করবে নিজেদের অধিকার। আজকে যারা প্রবীণ তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ; আর তোমাদের বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিমত্তায় নির্মিত হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ, গত দেড় দশকের লাখো শহীদদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ।’

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন।

তরুণ ভোটারদের কাছে ধানের শীষের জন্য ভোট চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক।’

তিনি বলেন, দেশের ১৩ কোটি ভোটারের মধ্যে গত দেড় দশকে প্রায় ৪ কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। তোমরা ভোটার হলেও ফ্যাসিবাদ চক্র তোমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তোমাদের হারানো ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বিএনপির গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য, পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলের গত দেড় দশকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বঞ্চিত ৩ কোটি ভোটারসহ সবার সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।

তরুণদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, তোমাদের নিজেদেরকে দক্ষ এবং যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সমাজের প্রতিটি সেক্টরে একমাত্র তোমাদের যোগ্য নেতৃত্বই পারে আগামীর বাংলাদেশকে বদলে দিতে। 

তিনি বলেন, তোমরা যদি সাহস ও সততার সাথে এগিয়ে যাও তাহলে বাংলাদেশের জনগণ তোমাদের সাথে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

সব শিক্ষার্থীকে  ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার দরকার নেই উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি সকল ছাত্র-ছাত্রীকেই কোন একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে হবে, এটি কোন জরুরি বিষয় নয়। তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে যার যার অঙ্গনে সফল হওয়ার জন্য, নিজেদেরকে যোগ্যতম হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি।’

১৯৭১ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই পরিণত বাংলাদেশে দেশের জনগণ আর বিভেদ, বিরোধ, প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধের রাজনীতি দেখতে চায় না। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ কারণেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএনপি কাজ করতে চায় উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণ চায় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। সুতরাং আর কথামালার রাজনীতি নয়। বরং আমাদেরকে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতি করতে হবে। এই মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিএনপি আগামী দিনের ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায়। 

এসময় তিনি শিক্ষাঙ্গনে তথ্য প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার, বাংলা ভাষা ছাড়াও অন্য ভাষায় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, অনলাইন বিজনেস বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ, ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংকে আরও গতিশীল করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। 

তারেক রহমান বলেন, ‘ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদেরকে যাতে কর্মসংস্থান নিয়ে হতাশায় পড়তে না হয় এজন্য বিএনপি সেই আলোকেই শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এবং জব অপরচুনিটির জন্য কর্মপরিকল্পনা বা প্ল্যানিং তৈরি করেছে। একাডেমিক স্টাডির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে  স্কুল পর্যায় থেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অর্থাৎ যার যেটি ইন্টারেস্ট এই ক্ষেত্রগুলোতে ব্যবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দিয়ে আগামী দিনে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজানোর কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে স্কুল বা কলেজগুলোতে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিও শেখার সুযোগ আছে। কিন্তু এই ইংরেজি ভাষার উপরে আমরা বিশেষভাবে আলাদাভাবে নজর দিতে চাই। যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীরা এই ভাষাতে আরো ভালোভাবে  দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এর পাশাপাশি আমরা আরো কতগুলো ভাষা রাখতে চাই। যেই ভাষাগুলো জানা থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা পৃথিবীর যেখানেই যাক না কেন তারা সেই দেশে কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করতে পারবে।’

ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি কিছু ব্যবহারিক বিষয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভাষা শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আমরা আরো কতগুলো ব্যবহারিক বিষয় স্কুল পর্যায় থেকে সংযুক্ত করতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ তৈরি করতে চাই।’

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইকমার্স প্ল্যাটফর্মে পণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমরা এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাই। এই সুযোগে দেশে আন্তর্জাতিক মানের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের উৎপাদন বাড়িয়ে বিশ্বে  এই সকল পণ্য সরবরাহ করতে চাই।  

ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের প্রায় ১০ লাখেরও বেশি ভাই বোন ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে শত কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কিন্তু বর্তমানে গেটওয়ে সমস্যা কারণে অনেকে অর্জিত অর্থ দেশে আনতে পারছে না।  আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে দ্রুততার সাথে আমরা এই সমস্যাটির সমাধান করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল ও শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসার মো. ইয়াহিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত
জুলাই অভ্যুত্থানের গেজেট থেকে ৮ শহীদের নাম বাতিল
গুচ্ছের ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত ভর্তি শুরু 
মনিজা রহমানের কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি বাক্যই এক একটি প্যান্ডোরার বক্স
৪৮তম বিশেষ বিসিএসের ৩য় ধাপের মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ
ইসিতে শর্ত পূরণে তথ্য জমা দিয়েছে ৮০টি দল
প্রফেসর ড. এম. শমশের আলীর ইন্তেকালে জামায়াতে ইসলামীর শোক
বাংলাদেশকে হালাল পণ্যের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার: বিডা চেয়ারম্যান
তরুণদের হাত ধরেই শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠিত হবে : তারেক রহমান 
মানুষ অপেক্ষা করে আছে যে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে : মির্জা ফখরুল
১০