অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাফল্য

বাসস
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৩:২১

।। মহসিন বেপারী।।

ঢাকা, ৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে গত এক বছরে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ ও সংস্কারের ফলে বিগত এক বছর দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনগণের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের ফলে ঈদসহ পূজা-পার্বণে জনসাধারণ নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব পালক করতে পেরেছে।   

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পুলিশের অধিকতর জবাবদিহিতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এগুলো হলো- সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন করা, পুলিশ অ্যাক্ট-১৮৬১ ও পিআরবি’র প্রয়োজনীয় সংশোধন করা, বিশেষায়িত ইউনিটের বিধিবিধান প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সংশোধন করা, জনপ্রত্যাশা পূরণে যুগোপযোগী ও নতুন আইন ও বিধি প্রণয়ন, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিটের (বিশেষ শাখা, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই ইত্যাদি) পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধিতে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ৯৯৯ ইউনিটের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা (অপারেশনাল, মানবসম্পদ ও লজিস্টিকস্) বৃদ্ধি করা, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ডিপ্লোমেটিক জোন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা প্রদানসহ দেশের দুর্যোগপূর্ণ সময়ে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অপরাধ দমনে এপিবিএন-এর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা (অপারেশনাল, মানবসম্পদ ও লজিস্টিকস্) বৃদ্ধি করা।

এসব পদক্ষেপের ফলে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দেশের জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে। একটি সুপ্রশিক্ষিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে সমসাময়িক বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড রোধের মাধ্যমে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও জনস্বস্তি আনয়নে সক্ষম হয়েছে।

সরকার গৃহীত কার্যক্রমে বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্যবৃন্দের সাথে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় পুলিশের আইনী কাঠামো সংস্কার, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, পেশাগত দক্ষতা, সাংগঠনিক সক্ষমতা ও কল্যাণের নানা প্রস্তাবনা পুলিশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। 

অনলাইন জিডি

সাধারণ জনগণের পুলিশি সেবা দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া ও জনদুর্ভোগ হ্রাস করার জন্য অনলাইন জিডি সেবা কার্যক্রম চালু করেছে সরকার। এই অনলাইন জিডি পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম রেঞ্জ এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল থানায় প্রবর্তন করা হয়েছে। এ কার্যক্রম বাংলাদেশের সকল থানায় পর্যায়ক্রমে প্রবর্তন করা হচ্ছে।

বিজিবি’র পদক্ষেপ

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) তাদের নিয়োগ কাঠামো সংস্কারের মাধ্যমে ন্যূনতম স্নাতক পাশ বাংলাদেশি নাগরিকদের জুনিয়র কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে বিদ্যমান বিওপিগুলোকে যুদ্ধ ও আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্ট্রং পয়েন্ট বিওপি হিসেবে উন্নীত করা হবে।

বর্তমান কাস্টমস অ্যাক্টের পরিবর্তে বিজিবি অ্যাক্ট প্রণয়ন এবং সীমান্ত অপরাধ দমনে বিজিবিকে আইন প্রয়োগ ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন সংশোধনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সীমান্তে ড্রোন ও সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম যুক্ত করা, প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র (শর্টগান, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, পিপার স্প্রে ইত্যাদি) সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। বিজিবির দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে মাদক ও চোরাচালান রোধ কার্যকর হয়।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পদক্ষেপ

সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সংক্রান্ত নীতিমালা সংস্কারের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে ১০৯টি ইউনিটের মধ্যে ৯৩টির ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে শেষ হবে। বাহিনীতে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড

নতুন সৃষ্ট অসামরিক পদসমূহ নিয়োগ বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত না থাকায় জনবল নিয়োগ সম্ভব হয়নি; বিধিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। ট্রেনিং বেইস, ৩টি জোনের ফায়ার ট্রাক ইউনিট ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য মোট ৪৮টি পদ, বিদ্যমান ইউনিটের জন্য ১৬৯টি অসামরিক পদ এবং জাইকা প্রদত্ত ২৪টি রেসকিউ বোট ও ১টি প্রশিক্ষণ বোট পরিচালনার জন্য ১১৩টি পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া কোস্ট গার্ড জরুরি পরিষেবা (শর্ট কোড) চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)

এনটিএমসির আইন প্রণয়ন, নাম পরিবর্তন ও সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গঠিত কমিটি খসড়া আইন প্রস্তুত করেছে এবং আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। টিওএন্ডই ও খসড়া আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে নাম পরিবর্তন ও সাংগঠনিক কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, পুলিশ আইন ও প্রবিধান সংশোধন, অবকাঠামো ও জনবল বৃদ্ধি, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ চলছে।

এছাড়া জাতিসংঘের নীতিমালা অনুসারে পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা আইনগত বৈধতা পেলে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ক্যাম্পাসগুলো বন্ধের পর আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠে পুরো বাংলাদেশ : আসিফ মাহমুদ
কিছু মানুষ ও চিহ্নিত রাজনৈতিক দল ছাড়া সকলেই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা : আব্দুল্লাহ তাহের
‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তুলতে চাই : প্রধান উপদেষ্টা
সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
 জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পূর্ণ বিবরণী
নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে একটা গোষ্ঠী উন্মুখ হয়ে আছে : প্রধান উপদেষ্টা
জেনেভায় প্লাস্টিক দূষণবিরোধী চুক্তির আলোচনা শুরু
পিবিপ্রবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত
নানা আয়োজনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে উদযাপিত হলো ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’
ভবিষ্যতে কোনো সরকার যেন আর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা
১০