আইন মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে গৃহীত কার্যক্রম

বাসস
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৪২

।। দিদারুল আলম ।।

ঢাকা, ৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে চব্বিশের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৮ আগস্ট। এই সময় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে সংস্কারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান প্রসূত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ‘একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর বিচার বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করে কমিশন। বিচার বিভাগ সংস্থার কমিশনের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের গত ১ বছরে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া সংস্কারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হলো:

১.আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ সংশোধন:

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ও ১০ মে ২০২৫ তারিখে দুটি পৃথক অধ্যাদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করা হয়েছে।

২.আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন :

১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম ও ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রাপ্ত অভিযোগ ও অভিযুক্তের সংখ্যা, দ্রুত বিচার-নিষ্পত্তির প্রয়োজন, কাজের চাপ ইত্যাদি বিবেচনায় গত ৮ মে ২০২৫ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার এবং একই প্রজ্ঞাপনে ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে গঠিত ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

৩.আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংস্কার ও আধুনিকায়ন :

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুরাতন হাইকোর্ট বিল্ডিং তথা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

৪. সুপ্রীম কোর্ট বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন ও জারি :

গত ২১ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করা হয়। এই আইনের আওতায় ইতিমধ্যে (গত ২৮মে ২০২৫ তারিখে) দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিচারপতি নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এ গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে বিচারক হতে ইচ্ছুকগণ তাদের কাগজপত্র দাখিল করে। এরই ধারাবাহিকতায় উচ্চ আদালতে নতুন বিচারক নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।

৫. দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন :

দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধনের ফলে বাদী-বিবাদীকে আর দিনের পর দিন আদালতে দাঁড়িয়ে মৌখিক জবানবন্দি দিতে হবে না। জবানবন্দি লিখে এফিডেভিট আকারে জমা দিতে হবে। রায় পাওয়ার পর পৃথক জারি মামলা করতে হবে না, মূল মামলার অধীনেই জারি কার্যক্রম চলবে। রায় ও আদেশ কার্যকর করতে পুলিশসহ যেকোনো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিতে পারবে দেওয়ানি আদালত। দেওয়ানি মামলায় জেল হলে তার খরচ মামলার পক্ষ বহন করত, এখন সরকার বহন করবে। মামলা প্রলম্বনে সময়ের আবেদন করার সুযোগ হ্রাস ও হয়রানিমূলক মামলায় ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

৬. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন :

সংশোধিত আইনে পৃথক ‘শিশু ধর্ষণ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের বিধান, ৩০ দিনে তদন্ত ও ১০ দিনে বিচার, সাক্ষীর নিরাপত্তা, ভাতার ব্যবস্থা, ছেলে শিশু বলাৎকারকে পৃথক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিতকরণ করা হয়েছে। যৌতুকের দাবিতে জখম করার ছোট মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দায়েরের বিধান করা হয়েছে। ‘ধর্ষণ’ ও ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে যৌনকর্ম’ পৃথককরণ করা হয়েছে। গত ১৭ মে ২০২৫ তারিখ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মাগুরা বহুল আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় হয়েছে। রায়ে মামলার প্রধান আসামি শিশু আছিয়ার বড় বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে।

৭. পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা ২০১৫ এর সংশোধন:

পূর্বে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে হতো। কিন্তু অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী যাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই, তাদের জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন জটিল ছিলো। সংশোধিত বিধিমালায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশী বংশদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে No Visa Required স্টিকার থাকলে কিংবা জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলেই তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।

৮. বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালার সংশোধন:

বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন করে জেন্ডার বৈষম্যমূলক বিধান বাতিল করা হয়েছে, অনলাইনে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

৯. রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার :
২০০৯ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহারের কার্যক্রম চলছে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা সংক্রান্ত জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর কার্যালয় হতে উপস্থাপিত তালিকা পর্যালোচনা করে উপযুক্ত মামলাসমূহ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হচ্ছে। কমিটি ২৩ জুন ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৫৯টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।

১০. সাইবার আইনের অধীনে স্পিচ অফেন্স-সংক্রান্ত মামলা প্রত্যাহার :

রাষ্ট্র কর্তৃক দায়েরকৃত স্পিচ অফেন্স-সংক্রান্ত সকল মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই সংখ্যা ৪১৩টি।

১১. দুর্নীতি প্রতিবোধ কার্যক্রম :

বিচারক, রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা এবং আইন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর, সংস্কার কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের অর্জিত সম্পদের হিসাব বিবরণী ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে হিসাব বিবরণীগুলোর যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলছে। তাছাড়া বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করা হয়েছে।

১২. আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য সেন্টার প্রতিষ্ঠা :

সারাদেশের আটটি বিভাগীয় শহরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই তথ্য সেন্টারে বিচারপ্রার্থীকে আদালতের অবস্থান ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করছে। এতে বিচারপ্রার্থী জনগণ দালালদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পাচ্ছে। সারাদেশের সব আদালতে পর্যায়ক্রমে এই সেবা চালু করা হবে।

১৩. এপোস্টিল পদ্ধতিতে অনলাইনে সত্যায়ন সেবা চালু:

বিদেশগামী অথবা বিদেশে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নানা ধরনের সনদ বা ডকুমেন্টে সত্যায়নের প্রয়োজন হয়। এই সত্যায়ন সেবা আগে ম্যানুয়াল (সনাতনী) প্রথায় করা হতো যা এখন এপোস্টিল পদ্ধতিতে অনলাইনে করা হচ্ছে। ডকুমেন্টের হার্ডকপিতে ম্যানুয়্যালি সত্যায়ন করার সময় সেবা প্রার্থীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো এবং দালালের খপ্পরে পড়তে হতো। এপোস্টিল কনভেনশন-১৯৬১ অনুযায়ী এপোস্টিন পদ্ধতিতে সত্যায়নের ফলে সব ধরনের দালাল/মধ্যস্বত্বভোগী দূর হয়েছে এবং জাল বা নকল সিল ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে সত্যায়ন করার প্রবণতাও দূর হয়েছে। এর ফলে সেবাগ্রহীতাদের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে।

১৪. বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করা:

দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ যুগোপযোগী করতে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইন ও বিচার বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

১৫. বিচার ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন:

মডেল ই-কোর্ট স্থাপনে এবং মডেল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস প্রতিষ্ঠায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

১৬.আদালতে অবকাঠামো নির্মাণ :

চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ২৩ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট; ৬টি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট; ৫ টি মহানগর দায়রা জজ, ১০ টি জেলা জজ আদালতের ভবন নির্মাণ এবং ২৩ টি জেলা জজ আদালতের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে কার্যক্রম শুরু হয়।

১৭. পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন ডিজিটালাইজেশনে বিভিন্ন কার্যক্রম:

ডেভেলপমেন্ট পার্টনারসদের সহায়তায় একটি মডেল ই-কোর্ট স্থাপন করা। যেখানে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে রায় প্রকাশ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ধাপের কার্যক্রম ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। এই মডেল  ই-কোর্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে সারাদেশে ই-কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হবে।

১৮. মডেল সাব রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপন:

ডেভেলপমেন্ট পার্টনারস এর সহায়তায় মডেল সাব-রেজিস্ট্রি স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেখান নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পাদিত হবে। ৮ টি বিভাগীয় জেলায় পাইলট ভিত্তিতে আইনগত তথ্য সেবা কেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

১৯. বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী:

বিচারকগণ ও তাদের পরিবারের সদস্যগণের এবং রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তাগণ তথা সাব-রেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রার ও নিবন্ধন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও তাদের পরিবারের সদস্যগণের সম্পদের হিসাব বিবরণী ইতোমধ্যে দাখিল করা হয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগ ও এর অধীন দপ্তর সংস্থার কর্মচারীদের অর্জিত সম্পদের বিবরণী দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান হয়।

২০. গুম বিরোধী সনদ ও কমিশন:

গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। বিগত সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত তদন্ত কমিশনে আইন ও বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে।

২১. আইনগত সহায়তা আইন:

আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ গত ১ জুলাই জারি করা হয়েছে।

২২. সরকারি চাকরি আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি :

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। গত ২৩ জুলাই এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

২৩. সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ:

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ,২০২৫ গত ২১ মে জারি করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ রহিতক্রমে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিতে এবং সাইবার স্পেসে সংগঠিত অপরাধ সনাক্ত, প্রতিরোধ,দমন ও এসব অপরাধের বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে এ বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম আইন ও বিচার বিভাগে চলমান সংস্কার কাজ বিষয়গুলো বাসসকে জানান।
তিনি বলেন যে সকল সংস্কার চলমান রয়েছে। সেগুলো হলো:

১. ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্বিতীয়) সংশোধন অধ্যাদেশ এর খসড়া প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

২. গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

৩. ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত আইন সংশোধনের কাজ চলমান রয়েছে।

৪. স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

৫. অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি, পদায়ন, শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা ইত্যাদি সুপ্রীম কোর্টের একক নিয়ন্ত্রনে ন্যাস্তকরণসহ সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে।

৬. অধস্তন আদালতের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে গ্রহণের লক্ষ্যে আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলমান আছে।

৭. রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহারের সুপারিশের কাজ চলমান রয়েছে।

৮. উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সুপ্রিম কোর্ট এবং আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২টি পেপারলেস পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রযেছে।

৯. ই-কজলিস্ট কার্যকরকরণে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

১০. আদালতে অনলাইনে ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাকটিস নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

১১. আইন ও বিচার বিভাগের সাচিবিক ও প্রশাসনিক কাজ ডি-নথি সম্পন্ন করা হয়েছে।

১২. জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

১৩. সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা সেবা সম্প্রসারণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

১৪. অনলাইনে দলিল নিবন্ধন সেবা চালু সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

১৫. অনলাইনে বিবাহ নিবন্ধন সেবা চালুর কাজ চলছে।

১৬. সারাদেশের আদালত প্রাঙ্গনের স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হয়েছে এবং চলমান আছে।

১৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ গত ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে। আইন ও বিচার বিভাগ উক্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ করছে।

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের প্রশিক্ষণ ও প্রতিবেদন শাখা থেকে বলা হয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সহযোগিতায় ১৭ জুন ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত মোট ৪৭টি অধ্যাদেশ ও ৪০৫টি এসআরও জারি হয়েছে। এরমধ্যে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ১৭ টি অধ্যাদেশ, ১৩৯ টি এসআরও এবং চলতি ২০২৫ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত ৩০টি অধ্যাদেশ ও ২৬৬ টি এসআরও জারি হয়।

সংবিধিবদ্ধ প্রজ্ঞাপন ও আদেশের মধ্যে রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরসহ সকল অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল, গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আইন সংস্কারের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যাদী সম্পাদনে বিভিন্ন তদন্ত কমিশন গঠন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন, পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন। এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর অধিকতর সংশোধনী, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের কার্যসম্পাদন আদেশ, ২০২৪ অধিকতার সংশোধন, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এ সময়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে, লেজিসলেটিভ (লিগ্যাল) সার্ভিস গঠন, লেজিসলেটিভ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, কেন্দ্রীয়ভাবে আইন এবং আইনগত দলিলের খসড়া প্রণয়ন, লেজিসলেটিভ গবেষণা উইং গঠন, লেজিসলেটিভ সম্পাদনা উইং গঠন, ট্রিটি উইং গঠন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ক্যাম্পাসগুলো বন্ধের পর আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠে পুরো বাংলাদেশ : আসিফ মাহমুদ
কিছু মানুষ ও চিহ্নিত রাজনৈতিক দল ছাড়া সকলেই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা : আব্দুল্লাহ তাহের
‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তুলতে চাই : প্রধান উপদেষ্টা
সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
 জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পূর্ণ বিবরণী
নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে একটা গোষ্ঠী উন্মুখ হয়ে আছে : প্রধান উপদেষ্টা
জেনেভায় প্লাস্টিক দূষণবিরোধী চুক্তির আলোচনা শুরু
পিবিপ্রবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত
নানা আয়োজনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে উদযাপিত হলো ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’
ভবিষ্যতে কোনো সরকার যেন আর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা
১০