মো. সাজ্জাদ হোসেন
ঢাকা, ৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দায়িত্বভার গ্রহণের পর স্থানীয় সরকার বিভাগ সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি ও তারুণ্যের বলে বলীয়ান হয়ে গত এক বছরে নগর থেকে গ্রাম পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায়ে অভূতপূর্ব উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছে।
স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তর- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনে পলাতক জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে প্রশাসক নিয়োগের ফলে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে গতি এসেছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় নাগরিক আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনের পর রাজধানী ও বিভাগীয় শহরসহ দেশব্যাপী সুপেয় ও নিরাপদ পানি সরবরাহ, শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা নিরসন, শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ, ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারে স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে।
নগর ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির বিকাশে স্থানীয় সরকার বিভাগ বহুমুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুকূলে বিভিন্ন স্তরে বিপুল বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ৬১টি জেলা পরিষদে উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ বাবদ ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা থোক খাতে বরাদ্দ করা হয় ৪৬০ কোটি টাকা এবং উপজেলা পরিষদের জন্য পৃথকভাবে বরাদ্দ হয় ৭৫০ কোটি টাকা।
ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন খাতে ৮৫০ কোটি টাকার মধ্যে সাধারণ বরাদ্দ উপখাতে ৭৪০ কোটি টাকা ও বিশেষ বরাদ্দ ও অনুদান উপখাতে ১১০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের পরিচালন বাজেটে বরাদ্দ হয় ৬১৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা ও আনুতোষিক খাতে ৩০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন মেরামতের জন্য ৫৭ কোটি টাকা ৫৭৯টি ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ছাড় করা হয়।
শহরাঞ্চলে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোর উন্নয়ন সহায়তায় দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পৌরসভা উন্নয়ন সহায়তা সাধারণ বরাদ্দ উপখাতে ৩৪৯ কোটি টাকা ছাড় করা হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়ক, হাট-বাজার, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্যানিটেশন ও পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৯০০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক এবং ৩৫০০ কিলোমিটার পাকা গ্রাম সড়ক নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হয়।
এছাড়া ২১ হাজার ৫০০ মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট, ৩৫টি উপজেলা কমপ্লেক্স, ১১০টি গ্রামীণ হাট ও গ্রোথ সেন্টার এবং ৫৫টি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে।
এছাড়াও ২০ কিলোমিটার ব্রিজ ও কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ, ২০০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ৪৫০ কিলোমিটার খাল খনন ও পুনঃখনন, ৪০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ এবং ১২০টি রেগুলেটর ও সেচ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। নগর সেক্টরে ৭২৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ফুটপাত, ২০০ কিলোমিটার ড্রেন এবং ৫০০ মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মিত হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) নিরাপদ পানির উৎস ও স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ এলাকায় ৮১ হাজার ৯৮৮টি পানির উৎস, ১৫ হাজার ১১৪টি আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট ও রিভার্স অসমোসিস প্ল্যান্ট এবং ১ লাখ ২৭ হাজার ১৭৫টি স্বল্পমূল্যের স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপন করে। পৌর এলাকায় ১২১.৪৬ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ৩১টি উৎপাদক নলকূপ, ৫০টি পানির উৎস, ১৯টি পরীক্ষামূলক নলকূপ, ২৩টি পাম্প হাউজ এবং ১৫ হাজার ৫৩৩টি গৃহসংযোগ স্থাপন করা হয়। পরীক্ষাগারে মোট ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৫২টি পানির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে দৈনিক ২০০-২৭৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহে সক্ষম। সায়েদাবাদ (ফেজ ১ ও ২) এবং পদ্মা (যশলদিয়া) পানিশোধনাগারসহ মোট ৪টি প্ল্যান্টের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার, খুলনা ওয়াসা ১১০ এমএলডি এবং রাজশাহী ওয়াসা ১০৭.০৪ এমএলডি পানি সরবরাহ করছে। সারাদেশে ৮৫৯.৫৩ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১২১টি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন এবং ০.৮২ কিলোমিটার পুরাতন পাইপলাইন পরিষ্কার করা হয়েছে।
জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এনআইএলজি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে ৩০২টি প্রশিক্ষণ কোর্সে ৯ হাজার ৩৬৮ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের মাধ্যমে আইনগত পরিচিতি নিশ্চিত করতে দেশ ও বিদেশে অনলাইনে মোট ৮৯ লাখ ৫২ হাজার ৭৭১ জনের জন্ম নিবন্ধন এবং ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮০ জনের মৃত্যু নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।