
ঢাকা, ৫ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ধনী পরিবারের প্রধান ও বিশিষ্ট শিল্পপতি গোপিচাঁদ হিন্দুজা ৮৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি ‘জিপি’ নামে পরিচিত ছিলেন।
লন্ডন থেকে বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
হিন্দুজা ও তার পরিবার ভারতীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘হিন্দুজা গ্রুপ’ থেকে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক খাত, গণমাধ্যম, বিনোদন, তেলসহ মোট ১১টি খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ এসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তার মৃত্যু আমাদের পরিবারে গভীর শূন্যতা তৈরি করবে।’
তারা আরও বলেন, ‘তিনি তার অসাধারণ কর্মের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
হিন্দুজা তার বাবার সাধারণ বস্ত্র ও ট্রেডিং ব্যবসাকে বহুজাতিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। এটি বর্তমানে ভারতের অন্যতম বড় কোম্পানিও।
কোবরা বিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড করণ বিলিমোরিয়া বলেন, হিন্দুজা ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের অন্যতম প্রতীক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকিং, উৎপাদন বা প্রপার্টি ব্যবসা যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন, তারা সবসময় যুক্তরাজ্য ও ভারতকে একসঙ্গে রেখেছেন। জিপি শুধু যুক্তরাজ্য ও ভারতে পরিচিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিই ছিলেন না। তিনি দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। আমরা তাকে ভীষণ মিস করব।’
সর্বশেষ সানডে টাইমস রিচ লিস্টে ৩৫.৩ বিলিয়ন পাউন্ড সম্পদ নিয়ে শীর্ষে ছিলেন হিন্দুজা ও তার পরিবার। ২০২৪ সালের ফোর্বস তালিকায় ভারতের ১০০ ধনী ব্যবসায়ীর মধ্যে তারা ছিলেন ১১তম স্থানে।
চার ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন জিপি হিন্দুজা। কয়েক দশক ধরে তিনি পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সবার বড় ভাই শ্রীচাঁদ ২০২৩ সালে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান।
হিন্দুজার মুত্যর পর এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব কে দেবেন তা এখনও জানা যায়নি। তার এক
ছোট ভাই অশোক বর্তমানে ট্রাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অশোক লেল্যান্ডসহ ভারতে গ্রুপের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
হিন্দুজা গ্রুপের ব্যবসা বর্তমানে বিশ্বের ৪৮টি দেশে বিস্তৃত।
লন্ডনে পরিবারটির বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেন্ট জেমস পার্কের কাছে বেশ কয়েকটি বড় বাড়ি এবং হোয়াইটহলে অবস্থিত উইনস্টন চার্চিলের পুরনো ওয়ার অফিস ভবন। এই ওয়ার অফিসটি সম্প্রতি সংস্কার করে হোটেলে রূপান্তর করা হয়েছে।
জি পি হিন্দুজা জনসম্মুখে খুব বেশি আসতেন না। তবে তিনি ২০০১ সালের বিতর্কিত ‘হিন্দুজা কাণ্ড’-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
জানা যায়, ২০০১ সালে আরেক ছোট ভাই প্রকাশের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য তৎকালীন মন্ত্রী ম্যান্ডেলসনকে চিঠি লেখেন হিন্দুজা। এর কিছুদিন আগেই পারিবারিক দাতব্য সংস্থা থেকে বৃটিশ সরকারের ‘মিলেনিয়াম ডোম’ প্রকল্পে এক মিলিয়ন পাউন্ড দান করেছিলেন এই শীর্ষ ব্যবসায়ী। তখন ওই প্রকল্প তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও ছিলেন ম্যান্ডেলসন। এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
ওই ঘটনার জেরে ম্যান্ডেলসন বৃটিশ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তবে, পরবর্তীতে তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হননি।
গত বছর সুইজারল্যান্ডের আদালত প্রকাশ হিন্দুজা, তার স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূকে তাদের জেনেভার বাড়িতে থাকা গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে কারাদণ্ড দেয়।