সুনামগঞ্জ, ৬ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : কবি হেলাল হাফিজ কবিতার পংক্তিতে বলেছেন, ‘এখন যৌবন যার যুদ্বে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার’। ভাষা আন্দোলন, ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধ, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সকল বিপ্লবেই বাঙ্গালী জাতি সফল হয়েছে। আর তার কান্ডারী হিসেবে কাজ করেছেন বাঙ্গালী যুব সমাজ। যুব সমাজ কখনও দেশ রক্ষায় কখনও রাস্তায়, মিছিলে, মিছিলে গর্জে উঠেছে তাদের প্রতিবাদের ভাষা। আবার এই যুব সমাজই কবিতা, গল্প, নাটক ও গ্রাফিতির মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করছে।
ফ্রাসিজমের বিরুদ্বে কবিতা ও গ্রাফিতি একেঁ অনেকেরই কারাগারে যেতে হয়েছে। ১৯৪৩ সালে শিল্পচার্য্য জয়নুল আবেদীনও তার কলমের তুলিতে একেঁছিলেন দুর্ভিক্ষের চিত্র। শিক্ষার্থীদের এমন শিল্পকর্ম নজর কেড়েছে পথচারীদের। আর এরই মধ্যে এক বছর পার হলেও অনেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন এখনও এসব সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ।
২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদ পালানোর পর সুনামগঞ্জের ছেলে মেয়েরাও একেঁছিলেন তাদের মনের মাধুরী দিয়ে ফ্যাসিবাদের চিত্র। বিপ্লবী চেতনাকে জানান দিয়েছে যুবক-যুবতীরা দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কন করে।
‘বল বীর, বল উন্নত মম শীর’ ‘সুবোধ তুই ফিরে আয়’ ‘কল্পনা চাকমা কোথায়’ এইসব গ্রাফিতি একেঁ মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে বিজয় গাথাঁ।
সুবোধ অনেক আগেই পালিয়েছে। কে এই সুবোধ? জানা না গেলেও সারাদেশে এই গ্রাফিতির ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সেখানে লেখা হতো ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’। তবে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার বদলের কারণে সুবোধকে ফিরে আসার আহ্ববান জানানো হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘সুবোধ তুই ফিরে আয় সময় এখন পক্ষে’। সুবোধের দু’হাতে রয়েছে খাঁচা বন্দি রক্তিম সূর্য।
সুনামগঞ্জ শহরের রিভারভিউ এ শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার বদলের সাথে সাথে বদলে দিয়েছিলো সুনামগঞ্জের দেয়ালগুলোর রূপও। দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিলো প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী উম্মে তাবাস্মুম মোনা জানান, ২০২৪ এর ৬ আগষ্ট থেকে শুরু হয়েছিল সুনামগঞ্জের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালসহ সরকারি বেসরকারি ভবনের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা। এখনও দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আঁকা প্রতিবাদী গ্রাফিতি।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী সুমনা আক্তার জানান, ফ্যাসিবাদের পতনে আমরা আনন্দিত হয়েছি। তাই আমি ও আমার বান্ধাবীরা মনের আনন্দেই গ্রাফিতি আঁকছিলাম শহরের বিভন্ন দেয়ালে।
সুনামগঞ্জ করকারি কলেজ শিক্ষার্থী অর্নব, শুভ, ও নাহাত হাসান পলমী জানান, আমাদের আকাঁ গ্রাফিতি পথচারি থেকে শিক্ষার্থী সবার নজর কাড়ছে।
সরেজমিনে সরকারি সতীশ চন্দ্রবালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা দেয়াল লিখনে মেঘ বৃষ্টি উপেক্ষা করেই একেঁছিলেন। অন্তত ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী শিল্পকর্ম আঁকছিলেন। কেউ রং গোলাচ্ছেন, কেউ বা মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন আল্পনা এঁকে চলেছেন। দেশে যে সহিংসতা হয়েছিল তা ভুলে গিয়ে এগিয়ে যেতে চান সবাই। শিক্ষার্থীদের এমন শিল্পকর্ম নজর কেড়েছে পথচারীদের। অনেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন এখনও এসব সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ। আবার অনেকেই স্মৃতি হিসাবে তুলে রাখছেন এসব আঁকা গ্রাফিতি।