খুলনা, ৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : খুলনায় উদ্ধারকৃত অভিভাবকহীন দু’টি নবজাতক পেয়েছে নাম ও নতুন পরিবার। নাম রাখা হয়েছে সাফিরা মুমতাহিনা ও ফাতিমা জাহরা নূর।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কন্যা নবজাতক দু’টিকে তাদের নতুন অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিঃসন্তান দু’টি নতুন পরিবার নবজাতক দু’টিকে কাছে পেয়ে কোলে তুলে নেন।
এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারা সব নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে নিজেদের গর্ভজাত সন্তানের মত করেই লালন-পালন করবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এর আগে গত ২৭ জুলাই খুলনার ফুলতলা উপজেলার একটি সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি নবজাতককে। জন্মের পরপরই কে বা কারা তাকে ফেলে যায় সেখানে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের হাত ঘুরে পরে তার স্থান হয় খুলনা মেডিকেলে। অপর নবজাতকটি গত ২৯ জুলাই পাইকগাছা উপজেলায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী জন্ম দেন। কিন্তু নবজাতকের বাবার পরিচয় মেলেনি।
এদিকে, গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ফুটফুটে নবজাতক দু’টির ছবি ছড়িয়ে পড়লে নবজাতক দু’টিকে দত্তক নিতে আগ্রহী নিঃসন্তান ও কন্যা বিহীন দম্পতিরা সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। মোট ৫৩টি আবেদন জমা পড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। ৩ আগস্ট পর্যন্ত এ আবেদন গ্রহণ করা হয়।
এরপর খুলনা জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই বাছাই শেষে স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারের মাধ্যমে সব নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে নবজাতক দু’টিকে দুই পরিবারের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা আবিদা আফরিন বাসসকে বলেন, উল্লেখিত দু’টি নবজাতককে দত্তক নিতে মোট ৫৩টি পরিবার আবেদন করেন। আবেদনকারীদের অনেকগুলো শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৫টি শর্ত যাচাই বাছাই করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি।
তিনি বলেন, এছাড়াও সংশ্লিষ্ট দম্পতিদের সম্পত্তির অংশীদারিত্ব এবং ভবিষ্যতে তাদের সন্তান ধারণের সক্ষমতা নেই- এসব বিষয় দেখা হয়। যাতে করে নবজাতকরা শতভাগ অধিকার নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবার দু’টিতে বেড়ে উঠতে পারে এবং সন্তানের পরিচয় পরিপূর্ণভাবে পেতে পারে।
তিনি জানান, প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশু দু’টির পরিবারে খোঁজ নিয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হবেন। এছাড়া প্রতি তিন মাসে একবার জেলা সমাজসেবা দপ্তর তাদের খোঁজখবর নেবে। এভাবে প্রথম ছয় মাস তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এছাড়া যে কোনো সময় অসুস্থ হলে এ তথ্য অবশ্যই সমাজসেবা দপ্তরকে জানাতে হবে।
তবে শর্ত লঙ্ঘন হলে বা নবজাতকদের লালন-পালনে কোন ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দুই নবজাতককে গ্রহণ করে ব্যাংকার ও ফার্মাসিটিক্যাল দুই নতুন বাবা আবেগ আপ্লুত হয়ে বাসসকে বলেন, তারা যথাক্রমে ৮ থেকে ৯ বছর ধরে বিবাহিত জীবনে কোন সন্তান হয়নি। আর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এ কারণে তারা সন্তান পাওয়ার আশায় আবেদন করেছিলাম। এখন পাওয়ার পর তাদের অপূর্ণতা পূর্ণতা পেয়েছে। এ আনন্দের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
নবজাতক দু’টিকে নতুন পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর অনুভূতি প্রকাশ করে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, একটি মহৎ ও ভালো কাজের সাক্ষী হলাম। নবজাতক দু’টি তাদের পরিচয় পেলো, অভিভাবক পেলো, নাম পেলো। আমরা সবাই তাদের কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
অনুষ্ঠানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কানিজ মোস্তফা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্দিকাসহ সংশ্লিষ্ট উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৭ জুলাই খুলনার ফুলতলা উপজেলার একটি বাগান থেকে একটি নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। আর গত ২৯ জুলাই খুলনার পাইকগাছায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী মা হন। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পৌর সদরের প্রধান সড়কের পাশে একটি দোকানের সিঁড়ির ওপর সন্তান প্রসব করেন ওই নারী। রাস্তার ওপর ফুটফুটে ২ কেজি ৬ গ্রাম ওজনের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় ডাক্তার কিংবা ধাত্রী ছাড়াই। কিন্তু নবজাতকের বাবা কে তা জানা যায় নি।
এ সময় পথচারী উপজেলার ২নং কপিলমুনি ইউপির শ্যামনগর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হালিম সানা সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা শিশু ও মাকে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।